Wednesday, September 9, 2015

ইসলাম কি আসলেই যুদ্ধ বা তরবারীর মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে__

এ কথাটি প্রায়ই ইসলাম বিদ্বেষীদের কাছ থেকে শুনতে পাওয়া যায় যে, ইসলাম নাকি তরবারীর মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে। বিশিষ্ট্য পাশ্চাত্য লেখক 'Tomas karlil' তার লেখা "আবতাল ওয়া ইবাদাতুলবুতুলা'
নামক গ্রন্থে লিখেছেন, মুহাম্মদ (সাঃ) কে তরবারীর জোরে ইসলাম বিস্তৃতি করেছে বলে অপবাদ দেয়া বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, একজন লোক তরবারী চালিয়ে অনেককে হত্যা করবে কিংবা তার দাওয়াতে প্রচুর লোক সাড়া দেবে এটা অযৌক্তিক কথা।
.
আসলে, ইসলাম তরবারীর জোরে নয়; বরং ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে উদারতা এবং মহানুভবতার দ্বারা। মুলতো মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময় যে সমস্ত যুদ্ধ হয়েছে সেইসব যুদ্ধের অধিকাংশ যুদ্ধই কাফিরদের কারণে কিংবা সন্ধি ভংগের কারণে হয়েছে॥ আর ঐসব যুদ্ধে নিহতের পরিমাণ ছিল খুবই কম। বিভিন্ন ইসলামীক বইয়ের সুত্রনুসারে মুহাম্মদ (সাঃ) এর সময়কার যুদ্ধে,(বদর, উহুদ,খন্দক, খায়বর, মুতা, মক্কা বিজয়, হোনায়েন, ত্বায়েফ, তাবূক) মুসলিম পক্ষে ১৪০ জন এবং কাফের পক্ষে ২৯৩ জন সহ সর্বমোট ৪০৩ জন নিহত হয়েছে।
ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্যমতে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল চৌষট্টি লক্ষ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন কোটি থেকে ছয় কোটির মধ্যে। আগ্রাসী মার্কিন শক্তির বিরুদ্ধে আক্রান্ত ভিয়েতনামীরা দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ যুদ্ধ করে। এতে একক ভাবে আমেরিকা ৩৬ লাখ ৭২ হাজার মানুষকে হত্যা করে ও ১৬ লাখ মানুষকে পঙ্গু করে। "কেবল মাত্র খৃষ্টান ধর্মীয় আদালতের নির্দেশে খৃষ্টান নাগরিকদের নিহতের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ । স্পেন সরকার ৩ লাখ ৪০ হাজার খৃষ্টানকে হত্যা করে। যার মধ্যে ৩২ হাজার লোককে তারা জীবন্ত পুড়িয়ে মারে।[1]" এইসব যুদ্ধের সাথে ইসলামের কোনো যুদ্ধের তুলনাই চলেনা? ইসলাম তরবারী বা যুদ্ধের জোরে বিস্তৃত
লাভ করলে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম হতো না। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ইসলাম ধর্মের মানুষের সংখ্যা হবে সবচেয়ে বেশী। Pew রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় তাই উঠে এসেছে - "Islam, the world's fastest-growing faith, will leap from 1.6 billion to 2.76 billion by 2050, according to the Pew study. [2]"
.
"ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খ্রিস্টান থেকে মুসলমান গ্রহণের হার বাড়ছে॥ ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালে ১২.৫ মিলিয়ন খ্রিস্টান থেকে মুসলিম হয়েছেন।[3]"
"১৯৯৪ সালে মেক্সিকো সিটিতে মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮০ জন। তবে এখন অবস্থা বদলে যাচ্ছে। পিউ রিসার্চের গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১০ সালে মেক্সিকোতে মুসলামানদের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার।[4]"
২০০৯ সালে কানাডার ইসলাম বিদ্বেষী একটি মহল Muslim Demographics: The Islamic Tidal Wave নামে প্রকাশ করা একটি প্রামাণ্য চিত্রে বলেছে, বর্তমানে হল্যান্ড ও বেলজিয়ামে জন্ম নেয়া শিশুদের ৫০% মুসলিম। "United States এ মুসলিম এবং মসজিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই, এবং এটা নিয়ে ১৯৯৭ সালে CNN এ একটা রিপোর্ট ছাপা হয় - "Islam is also the fastest-growing religion. In the United States, for example, nearly 80 percent of the more than 1,200 mosques have been built in the past 12 years. [5]"
"যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভকারী ধর্ম হলো ইসলাম। দেশটিতে বর্তমানে মসজিদ রয়েছে ২১০৬টি । এ সংখ্যা ২০০০ সালের চেয়ে শতকরা ৭৪ ভাগ বেশি। এর মধ্যে নিউইয়র্কে ১৯২টি, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াতে ১২০টি, ফ্লোরিডায় ১১৮টি এবং টেক্সাসে রয়েছে ১৬৬টি। এমনকি মন্টানা, যেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাইরের জনসংখ্যা হচ্ছে শতকরা এক ভাগেরও কম, সেখানেও দুটি মসজিদ রয়েছে। (এএফপি, রয়টার্স)॥" "গত ২৫ বছরে ফ্রান্সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। গত ১শ’ বছরে ফ্রান্সে যতগুলো ক্যাথলিক গির্জা নির্মিত হয়েছে, গত ৩০ বছরেই তার চেয়ে বেশি মসজিদ ও নামায কেন্দ্র তৈরি হয়েছে।[6]"
"আগে ফ্রান্সের মানুষ প্রতি রবিবার গির্জায় যেতো, এখন যায় প্রতি দুই মাসে একবার। তাই গির্জা গুলোর তিন চতুর্থাংশই খালি পড়ে থাকে। [7]"
"১৯৯১ সালে রাশিয়াতে ছিল মোটে ৩শ’টি মসজিদ আর এখন ৮ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে আরো নিত্য নতুন মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। ১৯৯১ সালের আগে রাশিয়াতে কোন মাদ্রাসা ছিল না আর এখন ৫০-৬০টি মাদ্রাসা আছে এবং সেগুলোতে কমপক্ষে ৫০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছে। ১৯৯১ সালে রাশিয়া থেকে হজ যাত্রীর সংখ্যা ছিল মোটে ৪০! আর এ বছর ১৮ হাজারের বেশি। [8]""নেদারল্যান্ডে গির্জায় উপস্থিতির হার অনেক কমেছে সেই তুলনায় মসজিদে উপস্থিতির হার বেড়েছে॥[9]" "আফ্রিকায় খ্রিস্টান ধর্মের চেয়ে ইসলাম গ্রহণের হার অনেক বেড়েছে॥ [10]"
"ইসলাম ও খ্রিস্টান উভয় সাত শতকে চীনে প্রবেশ করেছে কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মের তুলনায় মুসলিম ধর্মের বৃদ্ধির হার অনেক বেশী। [11]"এছাড়া সৌদি আরবে কর্মরত বিভিন্ন অমুসলিম প্রতিনিয়ত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। "সৌদি আরবে,গত বছর ৬০০ চীনা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া গত জানুয়ারিতে আরো ৫০০ চীনা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। [12]"
.
মুলতো তরবারী বা যুদ্ধের মাধ্যমে নয়,ইসলামকে ভালোবেসেই অমুসলিমরা মুসলমান হচ্ছে। ডেইলি মেইল পত্রিকায় ২০১১ সালে একটা সংবাদ ছাপা হয় -
"How 100,000 Britons have chosen to become Muslim... and average convert is 27-year-old white woman" এই শিরোনামে॥ সেখানে বলা হয় - একজন নওমুসলিম, ৩১ বছর বয়সী লিনি আলী বলেন, "অন্যান্যদের মতই আমি নিয়মিত পার্টিতে যেতাম। তবু সব সময়ই মনে হত আমার জীবনে কিছু একটার যেন অভাব রয়েছে। মনে হত, আমি কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছি। পার্টি করে এবং প্রচুর মদ গিলেও আমি তৃপ্তি পেতাম না। শুধু মাত্র ইসলাম গ্রহণ করে ইসলামী অনুশাসন মেনেই তৃপ্তি লাভ করেছি।"
.
আসলেই ইসলাম তরবারি বা যুদ্ধের মাধ্যমে বিস্তৃত লাভ করেনি তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ইউরোপ আমেরিকায় ইসলাম গ্রহণের হার। সেই জন্যই ফ্রান্সের খ্যাতিমান ঐতিহাসিক " Gosthaf loban" তার রচিত "আরব সভ্যতা" নামক গ্রন্থে বলেছেন, ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, কোন ধর্ম শক্তি দিয়ে টিকে থাকতে পারেনি। ইসলামও তদ্রুপ তরবারী কিংবা শক্তি প্রয়োগ করে বিস্তৃত হয়নি; বরং, ইসলাম দাওয়াত উপস্থাপনের দ্বারাই বিস্তৃতি লাভ করেছে।"
.
তথ্যসুত্র ;
.
[1] Jon devenpot, An Apology for Muhammad and Koran.
.
[2] Cnn news, April 3,15
.
[3] Guinness World Records 03, page 102.
.
[4] ভালো খবর .কম
.
[5] Cnn news, april 14, 97.
.
[6] Israel national news, Catholic France, Adieu; Welcome, Islam.
.
[7] বাংলানিউজ ; ১২-৪-১৫
.
[8] দৈনিক ইনকিলাব,২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৪
.
[9] Jeroen Langelaar - Elsevier, July 29, 09.
.
[10] The Pew Forum on Religion & Public Life, December 19,11
.
[11] CIA, The World Factbook, accessed September 23, 11
.
[12] নয়া দিগন্ত, ২৯ জুন ১৫.