অসম্ভব যুক্তিবাদী একজন র্দাশনিক হেগেল বলেছিলেন : “আবেগ ব্যতিত পৃথিবীর
কোন মহত র্কমই সাধিত হত না”। গত পর্বে আমি আবেগ দিয়েই ঈশ্বরের অস্তিত্ব
প্রমানের চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়েছে ঈশ্বরের ধারনা যুক্তি র্তকের
র্উধ্বে থাকা উচিৎ। তারপরও আমাদের অনেকের বিভ্রান্তি আছে ঈশ্বর নিয়েই। তারা
যুক্তি চান। ঈশ্বরের থাকার পিছনে যুক্তি কে দেবে? একটা গ্রামে ৯৮ শতাংশ
মানুষ বলছে এই গ্রামে একদা বাঘ ছিল। ২ শতাংশ মানুষ বলছে না অসম্ভব, বাঘ
কোন কালেই ছিল না। থাকতে পারেনা। এখন কাদের দায়িত্ব প্রমান করা বাঘের
অস্তিত্বের। নিশ্চয় যে ২ শতাংশ মানুষ দাবী নিয়ে এল বাঘ ছিল না তাদের। ৯৮
শতাংশ আস্তিকময় পৃথিবীতে তাই যারা ঈশ্বরের সত্ব অস্বীকার করে তাদের উপরেই
দায়িত্ব র্বতায় ঈশ্বর নেই এটি প্রমান করার। আর ঈশ্বরের পিছনে সবচেয়ে ভাল
যুক্তি হচ্ছে ঈশ্বর নেই এটি প্রমান করতে না পারার ব্যার্থতা।
“তুমি মঙ্গল গ্রহে গিয়েছ। সেখানে গিয়ে তুমি দেখলে পাহাড়, পর্বত,
পাথর। পাথর দেখে তুমি বলবে, বহুকাল থেকে, সেই আদ্যিকাল থেকে পাথরগুলো
এভাবেই আছে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তুমি দেখতে পেলে একটা নাইকন ক্যামেরা। তুমি
সেটা হাতে নেবে। তখন তোমাকে বলতেই হবে, এর একজন স্রষ্টা আছে। ক্যামেরাটা
হাতে নিয়ে তুমি এ কথা ভাবতে পারবে না যে শূন্য থেকে এটা আপনা-আপনি এসে
হাজির হয়েছে। কারণ, এটা একটা জটিল যন্ত্র। এবার, আরেকটু এগিয়ে গেলে।
কোত্থেকে একটা খরগোশ বেরিয়ে এসে তোমার দিকে তাকাল। নাইকন ক্যামেরা কী করে?
ছবি তোলে। খরগোশ কী করে? অনেক কাজই করে। খরগোশের একটা কাজ হলো দেখা। এই
খরগোশের চোখ নাইকন ক্যামেরার চেয়ে হাজার গুণ বেশি জটিল। নাইকন ক্যামেরাটা
দেখে তোমার যদি মনে হয় যে এর একটা নির্মাতা থাকা দরকার, তাহলে খরগোশের
বেলায় এটা তোমার মনে হবে না কেন? আমার প্রথম যুক্তি যদি গ্রহণ করো, আমার
দ্বিতীয় যুক্তিটাও তোমাকে গ্রহণ করতে হবে।” – বলেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ।
ধারনাটি বলা হয়ে থাকে উইলিয়াম প্যালে ১৮০২ সালে প্রকাশ করেন। সেই যাই হোক
ঈশ্বরের থাকার পিছনে অসম্ভব সুন্দর যুক্তি নয় কি এটি? যদিও বির্বতনবাদের
তত্বে এই যুক্তিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় কিন্তু সব কিছুর একটা শুরু অবশ্যই থাকতে
হবে এই যুক্তিকে আজ র্পযন্ত কেউ উড়িয়ে দিতে পারে নি। সেই শুরুটা যে ঈশ্বরই
করেছিলেন অন্য কোন উপায়ে হয়নি এর দালিলিক প্রমান হয়তো নেই কিন্তু রয়েছে
লক্ষ কোটি বছর ধরে কোটি কোটি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের বিশ্বাস এর
প্রতি।যেহেতু আমাদের কাছে ঈশ্বরের বিকল্প কিছু নেই তাই আমাদের ঈশ্বরকে মেনেই এগোতে হবে। কিন্তু ঈশ্বরের দাবীদার তো আবার অনেক। ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপনের পরই চলে আসে র্ধমের প্রসংগ। আর ঈশ্বরে বিশ্বাস স্থাপিত হলেই র্ধমকেও মেনে নিতে হয়। কারন হিসাবে একটা উদাহরন দেওয়া যেতে পারে। এই ব্লগটির মালিক ব্লগারস ফোরাম। ব্লগারস ফোরাম কিন্তু ব্লগটি বানিয়েই ছেড়ে দেইনি ব্লগারদের কাছে ব্লগিং করার জন্য। তারা একটা নিয়মাবলী দিয়ে দিয়েছে যাতে ব্লগিং টি সুন্দর এবং সুস্থ হয়। আবার শুধু নিয়মাবলী দিয়েই ক্ষান্ত নয় একজন মডারেটর (পরির্বতনশীল) রেখেছেন ব্লগাররা নিয়মাবলী মানছে কিনা দেখার জন্য। একটি সামান্য ব্লগের ক্ষেত্রে যদি এমনটি হতে পারে তবে যে ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছে তিনি মানুষ যেন সুন্দর, সুস্থ, পরিচ্ছনভাবে পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে তার জন্য একটি নিয়মাবলী দিতে পারেন এবং সে সব নিয়মাবলী বোঝা ও মানার জন্য কাউকে প্রেরন করতে পারেন এটা মেনে নেওয়া কেন কষ্ট সাধ্য হবে?
বিবেকহীন পৃথিবীর বিবেক যে ধর্ম এ কথা আমরা বেমালুম চেপে যাই। ধর্ম না থাকলে যে গোটা সমাজ ব্যবস্থায় ভেঙে পড়ত এই সভ্যতা তৈরী হত না এ কথা আমাদের বোধগম্যই হই না। ধর্ম মিথ্যার বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, খারাপের বিরুদ্ধে বলেই সমাজ এত সুন্দর। সমাজের প্রতিটি মঙ্গল ধর্মেরই অবদান। অথচ আমরা আমাদের মিথ্যা অহমিকায় ধর্মকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করি। বলতে চেষ্টা করি ধর্মের প্রয়োজনীতা শেষ হয়ে গিয়েছে। একটি সঠিক,সুন্দর, শ্রেনীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সমাজে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা থাকবে। ভবিষ্যতই বলে দেবে ধর্মের অবস্থান কি হবে? তাই বলে কেউ অবিবেচকের মত ভূল, ক্ষতিকর কোন ধর্ম নিয়ে পড়ে থাকলে তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া ঠিক হবে না। কারন সভ্যতার বিকাশের জন্য সঠিক ধর্মের এগিয়ে যাওয়াটা খুবই জরুরী।
র্ধমের প্রসঙ্গ এলেই দেখা যায় সবাই সবার র্ধমকেই সেরা বলতে থাকেন কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলতে পারে না তার ধর্মই সঠিক। কারন হিসাবে মনে করে তার হাতে কোন ডেমো নেই – যে তার ঈশ্বরই সঠিক। আপনার সন্তান বড় হয়ে চোর হবে না সাধু হবে তার কোনো ডেমো কিন্তু আপনার হাতে নেই। আপনার বিশ্বাস একটু ভাল পরিবেশ এ রাখলে সে সাধু হবে তার উপর ভিত্তি করেই কিন্তু আপনি তাকে সু-শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আপনি বুকে হাত দিয়ে গ্যারান্টি দিতে পারেন না সে বড় হয়ে যুদ্ধাপরাধী হবে না। তাই সব সময় ডেমো’র দরকার হয় না। আমরা চেষ্টা করি কিন্তু ফলাফল নাও আসতে পারে। ক্লাশে সবাই ফাস্ট হয় না কেউ কেউ হয়। কিন্তু সবারই প্রচেষ্টা থাকে। যার সবচেয়ে সঠিক পথে প্রচেষ্টা থাকে সেই ফাস্ট হয়। আর যার কোনো চেষ্টাই নেই সে ফেল করে। তাই সঠিক পথের অনুসন্ধান করা নিতান্তই দরকার। আপনার কাছে ডেমো নেই বলে আপনি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। গ্যালিলিও’র কাছে ডেমো ছিল না। তাই বলে সে তার মত থেকে সরে আসে নি। আপনাকে প্রবলভাবে অনুসন্ধান করতে হবে সঠিক পথের।
সবারই চিন্তা করার ক্ষমতা আছে কিন্তু সবার চিন্তা সমান ভাবে বিকশিত নয়। এখন আপনি যদি দেখেন কেউ মল ত্যাগ করে সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে খাবার খাচ্ছে আপনি একজন সচেতন হিসাবে নিশ্চয় তাকে ছেড়ে দিতে পারেন না সে যা ইচ্ছা তাই করুক। ক্ষতি তো আর আপনার হচ্ছে না। কিম্বা একজন বাসে সিগারেট খাচ্ছে আপনি শুধু তাকে নিষেধ করেই থেমে যেতে পারেন না। কারন সে নিজের ক্ষতি’র পাশাপাশি আরেক জনেরও ক্ষতি করে চলছে। প্রয়োজন হলে আপনাকে তাকে নিবৃত্ত করতে বল প্রয়োগও করতে হতে পারে।
তাই কেউ যদি সঠিক পথে সন্ধান পাই তবে অবশ্যই তার উচিত অন্যকে সেই পথে ধাবিত করা। সেটা জোর করে, লোভ দেখিয়ে বা ভয় দেখিয়েও হতে পারে। ক্লাশের টিচার যেমন ভয় দেখিয়ে ছাত্রকে পড়ান। কিম্বা বাবা যেভাবে সন্তানকে পরীক্ষায় ফাস্ট হলে এটা ওটা কিনে দেবেন বলে লোভ দেখান। আপনি সত্য পথের অনুসারী হলে যারা ভ্রান্তিতে আছে তাদের কেন আপনি সেখানে আনবেন না। সচেতন হিসাবেই তো আপনার এটা কর্তব্য।
“উদারনীতির একটি বড় দূর্বলতা তার নিজ্বস্ব কোন সুনিদির্ষ্ট মানদন্ড নেই। সে আপোস করে, নম্র স্বরে সমালোচনা করে। কিন্তু একটা স্থির মানদ্বন্ড তুলে ধরে না। এই জন্যই প্রবল ভালবাসা বা প্রচন্ড ঘৃণা কোনটাই আসে না। …উদারনীতি’র নিয়ম এই, সে দয়া, দান, দক্ষিণা, সংশোধন-সবকিছুকেই সর্মথন করতে পারে, সমর্থন করতে পারে না, বিপ্লবকে। বিপ্লবকে সে বরং ঠেকিয়ে রাখতে চাই।”- কথা্টি ওই সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীরই। আমরা কেন জানি ঠিক এভাবেই সবাই চিন্তা করতে ভালবাসি। রাজনীতিতে যেমন আওয়ামীলীগে’র বিকল্প বি.এন.পি, বি.এন.পি’র বিকল্প আওয়ামীলীগ। মন্দের ভালোতে অভস্ত হতে হতে ভালো’র সংজ্ঞা ভুলে যায়। সাহস করে বলতে পারি না আমি দৌদূল্যমান না বরং আমি যেটা বলছি সেটাই সঠিক। আমি ঈশ্বরকে নিয়ে ভাবনায় দৌদূল্যমান কিন্তু এক কথায় বিশ্বাসও করতে পারি না আবার অবিশ্বাসও করতে পারি না। এখান থেকে বেরোনো দরকার। আমি এটা বিশ্বাস করি। এর বিপক্ষে কেউ ভালো যুক্তি দেখাতে পারে নি। তাই আমি এটাই প্রতিষ্ঠিত করব। কেন এমন দ্বীপ্ত শপথ নিতে পারব না। কোথাই যেন ভয়? একটু ইউটোপিয় চিন্তা। সংগ্রাম করতে ভয়। অথচ
“সংগ্রামই সত্য, সংগ্রামই সুন্দর”
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এর সময় কেউ নিজের ইচ্ছায় সম্পদের মায়াতে উপকূলে থেকে গেলে তাকে থাকতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে জোর করে উঠিয়ে আনতে হবে নিরাপদ আশ্রয়ে। অনেকে ভয় করেন – যদি সে অন্যকে জোরাজুরি করে তবে মৌলবাদীরাও একি সুযোগ নেবে। তারাও জোরাজুরি শুরু করবে। ফলে দাঙ্গা ফ্যাসাদ লাগবে। কিন্তু-
“জাল কহে, পঙ্ক আমি উঠাব না আর।
জেলে কহে, মাছ তবে পাওয়া হবে ভার।”
আমাদের সামনে পুরো একটা বিশ্ব ব্রক্ষান্ড পড়ে আছে। আর যুক্তি দিয়েই বলতে হবে কোন কিছু কখনো আপনা আপনি সৃষ্টি হয় নি। তাহলে অবশ্যই এর পিছনে একজন স্রষ্টা বা ঈশ্বর আছেন। আর এক খাপে যেমন ৭টা তরবারী থাকতে পারে না তেমনি একাধিক ঈশ্বরও থাকতে পারে না। তাহলে অবশ্যই একাধিক ধর্মও হতে পারে না। যেকোনো একটি ধর্মই তাহলে সত্য অথবা সত্য ধর্ম হয়ত এখনো আসেই নি। তাহলে আমরা এই স্বিধান্তে উপনীত হতেই পারি সব ধর্মই সত্যি কথাটি ঠিক না। এখন আমাদের বের করতে হবে সবচেয়ে নির্ভূল ধর্মটিকে। কেউ কোনও ধর্ম নিয়ে পড়ে থাকলেই তাকে থাকতে দেওয়া যেতে পারে না। আমাদের সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাহলে দেরী হয়ে যাবে ওই ব্যক্তি অযথা সময় ক্ষেপনে।
কেউ অন্ধ কুসঙ্কারাচ্ছন্ন ধর্মে বসবাস করলে তাকে আলোর ধর্মে নিয়ে আসাটা প্রয়োজনে জোর করে সেটাই কাম্য। এতে যদি অণ্যায়কারীরা বা মৌলবাদীরা সুযোগ নিয়ে এ ধরনের চিন্তার ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে ফ্যাসাদ বাধায় তবুও পিছপা হওয়া যাবে না। তাদের শক্ত হাতে দমন করে ন্যায়,সত্যকেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হয় কোন ধর্মই সত্য নয় নচেত যেকোন একটা ধর্মই সত্য – এটাই সবচেয়ে বাস্তবতা। সব ধর্মই সত্য – বলাটা নেহাত ভদ্রলোকি। গা বাচানোর কৌশল। আপোষকামীতা। যা শুভকর নয়।