Thursday, September 10, 2015

মানুষ এখন হয়ে উঠেছে ঈশ্বরের পাহারাদার---

ঈশ্বর বিশ্বাস আসলে ধারনাগত এবং অনেকটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। একটা শিশুকে যদি ছোট থেকে ঈশ্বরের ধারনা থেকে সম্পূর্ণ বাইরে রাখা হয় তাহলে সে কোনদিন জানবে না যে ঈশ্বরে বিশ্বাস বলে কিছু আছে। কথা হচ্ছে ঈশ্বর থাকা না থাকাটা অত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। তিনি থাকতেও পারেন আবার নাও থাকতে পারেন। কেউ যদি জোর দিয়ে বলে তিনি অবশ্যই আছেন তাহলে তা সম্পূর্ণ তার ব্যাক্তিগত মতামত। কারন প্রমান ছাড়া কোন কিছু মেনে নিতে কেউ বাধ্য না। আবার কেউ যদি বলে ঈশ্বর বলতে কিছুই নেই। সেটাও আসলে একটা ধারণা। কারন এখানে প্রমানের প্রশ্নই অবান্তর। কিন্তু কথা হচ্ছে ঈশ্বরের নামে যদি কোন উদ্ভট নিয়ম-কানুন জোর করে চাপানো হয় তাহলে সেইসব নিয়ম-কানুন মানার প্রশ্নই আসেনা।
ঈশ্বর আছেন নাকি নেই সেটা পরের কথা। তিনি থাকলেও মানুষ বাঁচবে না থাকলেও মানুষ বাঁচবে। মানুষ কেন গায়ে পড়ে ঈশ্বর নামক একটা ধারনাকে রক্ষার জন্য এত মরিয়া হয়ে উঠছে সেটাই হচ্ছে বর্তমানে সবচেয়ে ভাইটাল একটা প্রশ্ন। কেউ যখন ঈশ্বরকে মানতে চায়না তখন কিন্তু ঈশ্বর তাকে আঘাত করেন না বরং আঘাত করে ঈশ্বরের নাম ভাঙ্গানো কুলাঙ্গারের দল। তোষণ কিন্তু মানুষের মধ্যে যারা উচ্চবোধ সম্পন্ন তারাই পছন্দ করেন না সেখানে মানুষের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে উপস্থাপিত হওয়া ঈশ্বর কীভাবে তোষণ পছন্দ করতে পারেন? কারন ঈশ্বর যদি মানুষ বানিয়েই থাকেন তাহলে তিনি অবশ্যই মানুষের(সে যে কোন মানুষই হোক)চেয়ে উচ্চ বোধ সম্পন্ন। সেখানে তিনি কেন বলবেন,দৈনিক পাঁচবার তাকে ডাকতে হবে কিংবা উলুধ্বনি দিয়ে তাকে স্মরণ করতে হবে? তাকে ডাকার পদ্ধতিতে নেই কোন নতুনত্ব। হাজার বছরের পুরনো কথাই বারবার তাকে বলে/শুনিয়ে কি মানুষ তাকেই বিরক্ত করছে না? কোটি কোটি অনাহারী যে অভাবের তাড়নায় না খেয়ে থাকে তাতে কি তার কিছুই করার নেই। কেন ঈশ্বরের নামে এত যুদ্ধ আর রক্তপাত।
আসলে মানুষ ধর্ম নামক একটা চক্রবুহ্যের মাঝে পড়ে দিশেহারা হয়ে আছে। হাজার বছরের পুরনো অভ্যাস এখন রক্তের ভেতর মিশে হয়ে গেছে একাকার, তাই ধর্ম মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। সব কিছুতেই তাই মানুষ খুঁজছে ধর্ম। যদিও ধর্ম কোন মানব সভ্যতাকেই যুদ্ধ-বিবাদ আর ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি কিন্তু ধর্ম দাবি করে ধর্ম নাকি মানুষকে শান্তি দিয়েছে। যদি শান্তিই দেবে তাহলে ধর্ম কেন বারবার আঘাত হানে সভ্যতার নিদর্শন আর কবি-লেখকদের উপর। ধর্ম জানায় ঈশ্বরকে ভয় পেতে হবে। রাবিশ!!!!কেন ভয় পাবে মানুষ। কীসের ভয়? কাকে ভয়? এই বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে নাকি মানুষ ভয় পাবে!!!!!যত্তসব বোগাস কথা। স্বর্গের লোভ এখন আর মার্কেট পাচ্ছেনা। তাই ভয় আর আজাব-গজবের উপরই বেশি নির্ভর করতে হচ্ছে ধর্মকে। নির্ভর!!!!!ধর্মকেও নির্ভর করতে হয় মানুষের উপর। কারন মানুষ না থাকলে যে এইসব ধর্ম শিকায় উঠবে। তারপরও মানুষ ধর্মকে মনে করে মহান। অথচ ধর্ম টিকে আছে মানুষের কারনেই। ধর্ম আর রক্ষা করছে না মানুষকে। বরং মানুষই অত্যন্ত জোরালোভাবে রক্ষা করে চলছে ধর্মকে।
মানুষ এখন হয়ে উঠেছে ঈশ্বরের পাহারাদার। যেন মানুষ পাহারা না দিলে ঈশ্বর নামক সত্তা হারিয়ে যাবে। আসলেই হারিয়ে যাবে। যে জাতি, যে সভ্যতা যুক্তি আর জ্ঞানের কথার চেয়ে আবেগ আর ভাবের কথার দাম বেশি দেয় ইতিহাস তাদের খুব একটা ভালো চোখে দেখেনা। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। মানব সভ্যতা পেরিয়ে গেছে কয়েক হাজার বছর আর এই হাজার বছরে মানুষ তাদের জ্ঞান ভান্ডারকে করে তুলেছে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। এই সমৃদ্ধি ধর্মের কারনে হয়নি। কারন ধর্মের কথা যদি অক্ষরে অক্ষরে মানুষ পালন করতো তাহলে মানুষ আজো পড়ে থাকতো গুহা যুগে। অজ্ঞানতা ধর্মের উর্বর ভূমি। যেখানে জ্ঞান নেই, নেই জানার সুযোগ সেখানেই ধর্ম নামক এক প্রথা চাপিয়ে দিয়েছে প্রাচীন যুগের মানুষ। তাদের কল্পনায় ছিল এমন এক শক্তি যা কিনা তাদের সব সমস্যার সমাধান দেবে। অথচ আজ মানুষ জানে কেউ তার সমস্যার সমাধান দেয়না। মানুষকেই নিজের সমস্ত জ্ঞান-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সকল সমস্যার সমাধানের পথ বের করে আনতে হয়।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ আর জাত-পাতের দোহাই তুলে ধর্ম অনেক দিন ধরেই পৃথিবীর বুকে চালিয়ে আসছে এক রমরমা ব্যবসা। লোভীর জন্য অনন্ত সুখের স্বর্গ আর ভীতুর জন্য আগুনের নরক এই হলো ধর্মের চাল, যা দ্বারা ধর্ম পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষকে করে রেখেছে মোহাচ্ছন্ন। বর্তমান পৃথিবীতে প্রধান যে ধর্মগুলো আছে সেগুলোর একটিও শতভাগ পালন করা এই যুগে অবাস্তব ব্যাপার। কেউই এখন আর শতভাগ ধর্ম পালন করেনা কিন্তু ভয় আর লোভ মানুষ কে করে রেখেছে ধর্মের প্রতি অনুরক্ত কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ ধর্মকে প্রতিনিয়ত অস্বীকার করে আসছে। স্রষ্টা নামক কাল্পনিক ধারনাকে কেউ ভালোবাসেনা। ধার্মিকদের যে অনুভূতি তাদের কাল্পনিক স্রষ্টার জন্য তার আসল নাম হলো ভয়। ভয়ের ভিত্তির উপর ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে। জ্ঞান ভয়কে জয় করে। যুক্তি অজ্ঞানতাকে করে উন্মোচিত এবং সকল ভুল ধারনাকে করে নির্বাসিত। তাই ধর্ম সব সময় যুক্তি আর জ্ঞানের বিপক্ষে। ধর্ম ভালোবাসে আনুগত্য আর প্রশ্নাতীত মেনে নেয়া। অথচ বর্তমান যুগ হচ্ছে বিজ্ঞানের যুগ। আর যুক্তি আর জ্ঞান হচ্ছে বিজ্ঞানের শুরু আর শেষ কথা। তাই ধর্মের জন্য প্রধান হুমকি বিজ্ঞান। বিজ্ঞান যত আগাবে ধর্ম তত পিছে সরে যাবে।
বিজ্ঞান যখন চরম উন্নতির শিখরে পৌছে যাবে ধর্ম তখন হবে প্রাচীন গবেষণার বিষয়বস্তু। ধর্ম মানুষকে করে তোলে স্থবির আর বিরক্তিকর। কিন্তু যুক্তি আর জ্ঞান মানুষকে করে সচল আর আনন্দদায়ক।