Thursday, September 10, 2015

আর রেখোনা আঁধারে আমায়; দেখতে দাও... (প্রসঙ্গঃ আরজ আলী মাতুব্বর-এর ধর্মদর্শন)

রেজিস্ট্রেশনের পর আজই আমি প্রথম ব্লগ-এ ঢুকেছি, এবং ঢুকে স্বল্প সময় 'ব্লগাইয়া' যা বুঝলাম তার সারমর্ম হলো কারো কারো আই.কিউ অতিশয় বিপজ্জনক মাত্রায় কম এবং তাদের মধ্যে কিছু প্রাণী আবার অল্পবিস্তর টাইপিং-ও জানে (মূলতঃ 'গাইল')!! এবং আলোচনার বিষয়বস্তু যা-ই হোক না কেন; স্টিফেন হকিং কিংবা কদুর তৈল; তারা তাদের সুগভীর(!) চিন্তাপ্রসূত মতামতের অবিরল ধারায় আমাদের যুগপৎ সিক্ত এবং ধন্য করে যাচ্ছেন এবং ঈশ্বর চান তো আমাদের মতো অর্বাচীনদের 'এডুকেট' করার মহান দায়িত্ব তারা তাদের শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত পালন করে যাবেন ইনশাল্লাহ...। অবস্থা যখন এহেন; তখন টুঁ শব্দটিও না করে একেবারে 'স্পিকটি নট' হয়ে থাকাটাই সম্ভবতঃ 'গাইল' খাওয়া থেকে বাঁচার মোক্ষম উপায়। ...বুঝি ঠিকই কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না "চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী"! আমি নাদানও ধর্মের কাহিনী না শুনে আপনাদের ব্লগজগতে বেকুবের মতো পা রাখতে যাচ্ছি কতিপয় মহান জ্ঞানীদের সঙ্গসুখের কল্পচিত্রে বিমোহিত হয়ে। অধমের বেবাক বাকোয়াজী নিজগুনে মার্জনা করিতে সকলের মর্জি হয়...
সম্প্রতি (৮ই নভেম্বর) আরজ আলী মাতুব্বরের কিছু লেখা নাস্তিকের ধর্মকথা ব্লগে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবিধ মন্তব্য আসার কথা এবং এসেছেও। কেউ যেমন মাতুব্বর সাহেবের প্রশ্নগুলোকে 'মৌলিক, জরুরী এবং লাজওয়াব' মনে করেছেন আবার কেউ কেউ তাঁকে সস্তাদরের চিন্তক বলে মন্তব্য করার ধৃষ্টতাও দেখিয়েছেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে তাঁর প্রশ্নগুলো বরং 'সাহসী' এবং এর সন্তোযজনক জবাব সম্ভব। হাসন রাজা-র মতো সম্পদশালী হলে কিংবা লালন-এর মতো সংসারত্যাগী হতে পারলে কে জানে হয়তো তিঁনি তাঁর জীবদ্দশায় জবাব পেয়ে যেতে পারতেন (অনুমাননির্ভর কথার জন্য মাফ চাইছি)। আসলে আমাদের দূর্ভাগ্য যে ধর্মব্যবসার পুরোটাই এখন যাদের নামে পেটেন্ট করা তারা ঐতিহ্যগতভাবে কেবল ঠুলি পরা গরুর মতো গৎবাঁধা পথে হেঁটে হেঁটে ব্যবসা বাদে এখন আর কিছুই জানেন না। এরা মীলাদ-এ কিয়াম করা নিয়ে সংঘর্ষ করাকে জিহাদের সামিল মনে করে (দেওয়ানবাগী বনাম চরমোনাই পীরের সংঘর্ষের কথা স্মরণ করুন) কিন্তু জানেনা যে মীলাদ নামক যে প্রথা এখন আমরা ধর্মের নামে চালাচ্ছি তা আসলে বিদআ'ত (কুপ্রথা)। সাহাবীদের যুগে তো নয়-ই, তাবেঈন এবং তাবে-তাবেঈনদের যুগেও এইধরনের কোনো উদ্ভট রেওয়াজ ছিলোনা। কিংবা হয়তো জানা সত্ত্বেও 'মালপানি'র ধান্ধায় এই কুপ্রথা জিইয়ে রাখছেন! এরা 'হিলা' প্রথা কিংবা 'তালাক্ক-এ-বাইন' কিংবা ইদ্দতকিংবা 'জিনাত-এ-জাহেরী' নিয়ে বাহাস করতে ক্লান্ত হয়না কিন্তু মোহরানার অর্থ সম্পূর্নরূপে পরিশোধ না করা'তক* স্ত্রী সংসর্গ যে ব্যভিচারের নামান্তর সেটা কোরানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও সাহস করে বলতে পারেনা। বলতে পারে না যে (যদি তারা কোরান অনুযায়ী বলে) এভাবে তারা নিজেরা ধীরে ধীরে একটা জারজ-সম্প্রদায়ে পরিণত হচ্ছে (মাফ করবেন)। যেখানে কোরান বলে 'খ্রীষ্টান, ইহুদিসহ অন্য ধর্মাবলম্বীরাও যদি তার প্রতিপালকের ওপর বিশ্বাস রেখে ভালো কাজ করে তবে তারা শেষ বিচারের দিনে পুরষ্কৃত হবে এবং তাদের ভয়ের কোনো কারন নেই (সম্ভবতঃ ২:১৬৯, আমি এই মুহূর্তে ঠিক নিশ্চিত নই)' সেখানে তারা বলে তাদের মনগড়া ধর্মীয়-বিভাজনের কল্পকাহিনী। কোরানে যেখানে একবারও সালাত (এরা বলে নামায!) "পড়া"র কথা বলা হয়নি সেখানে এরা "পড়া"র কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। এরা কি কখনো জানার চেষ্টা করে যে 'কায়েম করা' বলতে কী বুঝায়? ক্কুরবানী এদের কাছে কেবল সাড়ম্বরে "নির্মম পশু জবাই"! আমিত্ব এবং অহংকার বর্জনের সাথে রূপক পশু জবাইকে এরা একই মনে করে। ক্কুরবানী-র মাংস (নাউজুবিল্লাহ্!)-কে মাংস বলাতেও নাকি এদের ঈমানে গ্যাংগ্রিন হয়, বলতে হবে 'গোশত'! এরা বলে টেলিভিশন দেখা নাকি নাজায়েজ কিন্তু সংবাদপাঠিকা "আল্লাহ হাফেজ" না বলে "খোদা হাফেজ" বললে আন্দোলন ঠিকই দানা বেঁধে ওঠে। অথচ এরা 'কোরান শরীফ' নামক এক অদ্ভূত শব্দে কোরানকে সম্বোধন করে, নিজেদেরকে দাবী করে "মুসলমান"(!?) বলে। কি বিচিত্র! এরা জানেনা ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসার প্রথম কতজন প্রিন্সিপাল অমুসলিম ছিলেন, জানেনা কোরানে স্রষ্টার সর্বনাম হিসেবে বহুবচন কেন এসেছে। তাদের কাছে 'আয়াত' শব্দের অর্থ নাকি পংক্তি! ইসলামে যেখানে গণতন্ত্রের কোনো স্থান নেই সেখানে এরা তথাকথিত গণতান্ত্রিক উপায়ে 'ইসলামী হুকুমত' কায়েমের মতো অনৈসলামিক আন্দোলনে 'শহীদ' হবার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। এরা মুয়াবিয়াকে সাহাবী 'আমীর মুয়াবিয়া' বলে অথচ 'জিযিয়া কর রদ করা' কিংবা 'গাদির-এ-খুম-এর ঘটনা' কিংবা ফাতেমা (রাঃ) ইন্তেকাল কিভাবে হয়েছিলো জানেনা। এরা কিভাবে মাতুব্বর সাহেবের মাটিঘেঁষা মৌলিক প্রশ্নের জবাব দেবে, বলুন? এদের আক্কেলতো এরা মীলাদের জিলাপীর মতো পেঁচিয়ে ফেলেছে (যেখানে আল্লাহ বলেন সীরাতুল মুস্তাকিম তথা সত্য, সরল পথের কথা)। এরাই মূক, বধির ও অন্ধ (কোরান দ্রষ্টব্য), এদেরকেই আল্লাহ কোরানে বারংবার প্রশ্ন করেছেন "আফালা তা'ক্কিলুন", যার বাংলা অর্থ অনেকটা এরকম "তোমরা কি আক্কেল খাটাও না?"...


আর শুধু জিলাপীখোরদের কথা বলেই বা কি হবে, অন্য ধর্মের ধ্বজাধারীরাও বড় একটা সাধু নন। এক "ওঁ" শব্দের মাজেজা-ই তো অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সারা জীবনে জানবার সুযোগ করে উঠতে পারেন না, তায় আবার বেদ! ওঁনারা রাধা-কেষ্ট'র লীলার কীর্তন করেন কিন্তু ক'জন এই আদিরসঘন গপ্পো-র রূপকের আবডাল সরিয়ে মূল ভক্তির রসটুকু পান? যারা পান তাদের সংখ্যা নিশ্চয়ই বাৎসায়ণ-রসপুষ্ট লোকের সংখ্যার চেয়ে বেশী নয়।


বুঝতে পারছি আমি কথার খেই এবং মাতুব্বর সাহেব দু'টোকেই ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছি (এতোক্ষনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে...!)। আজ তবে এইটুকু থাক, বাকি কথা (প্যাঁচাল) পরে হবে... ...

আর শুধু দু'টো বিষয়:
১. ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি না বরং মনে করি ধর্মের নামে এখন যা চালু আছে তার সবগুলোর প্রোটোটাইপ-ই এক মহাশক্তিধরের কাছ থেকে আসা, যে কারনে মূলসুরে ঐকমত্য (সরকার না কিন্তু!) আছে।
২. কারুকে ছোট করা কিংবা উস্কানী দেয়া আমার ইচ্ছা নয়। তারপরও কেউ আহত হয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।