বর্তমান
বিশ্বে মহাকাশ বিজ্ঞানের সবচেয়ে আধুনিক, আলোচিত, স্বীকৃত মতবাদ হলো "The
Big Bang Theory" বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব। এই তত্ত্বে মহাবিশ্বের রচনার
শুরুর কথা বলা হয়েছে।
আজ থেকে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে এই মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন এবং উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। এই ধারণাটিকেই ভৌত বিশ্বতত্ত্ব বলা হয় মহা বিস্ফোরণ বা বৃহৎ বিস্ফোরণ । বিজ্ঞানী এডুইন হাবল প্রথম বলেন, দূরবর্তী ছায়াপথসমূহের বেগ একসাথে করে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এরা পরষ্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আপেক্ষিতার সাধারন তত্তের ফ্রিদমান-ল্যমেএ-রবাটসন-ওয়াকার নকশা অনুসারে এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই তত্ত্বসমূহের সাহায্যে অতীত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দু অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই অবস্থায় সকল পদার্থ এবং শক্তি অতি উত্তপ্ত এবং ঘন অবস্থায় ছিল। কিন্তু এই অবস্থার আগে কি ছিল তা নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন মতঐক্য আসতে পারেনি।
এই তত্ত্বটি ১৯২৯ সালে বিজ্ঞানী এডুইন হাবল সর্বপ্রথম আবিস্কার করেন। পরবর্তীতে স্টিফেন হকিং সহ প্রায় সকল বিখ্যাত তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানি এর বাস্তবতা মেনে নিয়েছে।
পবিত্র কুরআনের সূরা আল আম্বিয়ার (২১) আয়াত নং-৩০ এ বলা হয়েছে-
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী একত্রিত ছিলো, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?
Do not the Unbelievers see that the heavens and the earth were joined together (as one unit of creation), before we clove them asunder? We made from water every living thing. Will they not then believe?
এখানে দুটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উল্লেখ হয়েছে, (১) আকাশ-পৃথিবী একত্রিত থাকা এবং পরে পৃথক হওয়া (২) প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি হওয়া। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানী এ দুটির একটিও অস্বীকার করতে পারেনি।
যারা বলে কুরআন মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নিজের রচনা, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আরব মরুভুমীর এক অক্ষর জ্ঞান হীন (দুনিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে) মানুষকে কে এই কথাগুলো শিখিয়ে গেলো? কোথা থেকে তিনি পেলেন এই সূত্র? তবে কী নাস্তিকদের বানর বাপ-দাদারা এগুলো তার কানে কানে বলে এসেছে? আর যদি তা না হয়, তাহলে এই কুরআন পৃথিবীর সবকিছুর উপর একক কর্তৃত্বশীল সর্বশক্তিমান আল্লাহর রচনা না হয়ে উপায় আছে?
কোন নাস্তিক পারলে প্রমাণ সহ উত্তর দিয়ে যাক বা যুক্তি খন্ডন করে যাক।
পৃথিবীতে সবচেয়ে জটিল ও অদ্ভুত যন্ত্রটি সম্ভবত মানব দেহ। সুক্ষ্ণ, জটিল আর আশ্চর্যজনক যন্ত্রাংশের সমন্বয় তৈরি এই যন্ত্রটি। এগুলোর কাজকর্ম এতটাই সুক্ষ্ণ ও জটিল যে সেগুলোর কোন একটি সম্পর্কে সঠিক ধারনা লাভ করতে গিয়ে কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
এই যেমন ধরুন, আমাদের বাহ্যিক তথা শারীরিক অনুভূতি। যখনই গ্রীষ্মের রোদ আমাদের গায়ে এসে পড়ে আমরা বলি ”ওহ! কি গরম।”; আবার মাঘের প্রত্যূশে হাত-মুখ ধোয়ার সময় বরফ-শীতল পানির সংস্পর্শ পেয়ে মনের অজান্তেই বলে উঠি, “ইস! কী ঠান্ডা”; আবার মা যখন মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে যায়, মনে মনে ভাবি “আহ! কী শান্তি।’’
কীভাবে আমরা এই অনুভূতি গুলো বুঝতে পারি? এই প্রশ্নের উত্তর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানীর কাছে ছিলো না। আগের দিনে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, প্রাণী শরীর ঠিক যান্ত্রিক ডিভাইসের মতো, যা মোটর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা শক্তিকে রূপান্তরিত করে, ফলে আমরা বুঝতে পারি। অর্থা, শরীরের কোন স্থানে স্পর্শ অনুভূত হলে ঐ স্পর্শক থেকে এক প্রকারের শক্তি প্রবাহিত হয়, যা কিনা মস্তিস্কে প্রবাহিত হওয়ার পর আমরা সে স্পর্শের অনুভুতি বোধ করতে পারি। এই তত্ত্ব মোটামুটি ১৯০৬ সাল পর্যন্ত টিকে ছিলো। কিন্তু ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস স্কট শেরিংটন (Charles Scott Sherington) বিভিন্নবিদ পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হন মূল বিষয় আসলে এমন কিছুই না। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ ও অন্য সকল প্রাণীর চর্মাবরণের ঠিক নিচেই অবস্থান করে নোসিসেপ্টরস (Nociceptors) ও অটোনমিক নার্ভ (Autonomic nervous) সিস্টেম। চামড়ার ঠিক নিচেই অবস্থান করায় এরা খুবই স্পর্শকাতর। চামড়ার উপরে হওয়া যে কোন কার্যকলাপ ও অনুভূতি এরা খুবই দ্রুত গ্রহন করে এবং নিউরন সিস্টেমের মাধ্যমে আমাদের মস্তিস্কে প্রেরণ করে, ফলে আমরা সেই কার্যকলাপ বা অনুভূতি বোধ করতে পারি। এবং সমস্ত প্রক্রিয়াটি যে কত দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয় তা আমরা সহজেই বুঝতে পারছি। এটাই বিজ্ঞানের স্বীকৃত তত্ত্ব। এই আবিস্কারের জন্য ১৯৩২ সালে বিজ্ঞানী চার্লস স্কট শেরিংটন চিকিৎসা ও শরীরবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
এখন এই আয়াতটি দেখুন-
”إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِآيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيهِمْ نَارًا كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُواْ الْعَذَابَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا
এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।
Those who reject our Signs, We shall soon cast into the Fire: as often as their skins are roasted through, We shall change them for fresh skins, that they may taste the penalty: for Allah is Exalted in Power, Wise. ”
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসীদের আখিরাতের শাস্তির কথা বর্ণিত আছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে, উপরোল্লিখিত বিষয়ের সাথে এই আয়াতের সম্পর্ক কী? একটু খেয়াল করে দেখুন, “ তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে।” একথা দ্বারা এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে মানুষ অনুভব করে চামড়ার মাধ্যমে, কোন শক্তি বা ডিভাইসের মাধ্যমে নয়।
এখন ইসলাম বিদ্বেষী দালাল চক্রের কাছে প্রশ্ন, আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে, যখন মানুষ চামড়ার গঠন, রক্তের প্রবাহ ইত্যাদি সম্পর্কেই সঠিক ভাবে জানতো না, জানতো না কোন নিউরন বা কোষ সম্পর্কে, সেই সময় দুনিয়ার অন্যতম পশ্চাৎপদ বেদুইন অঞ্চলের অক্ষর জ্ঞান হীন (দুনিয়ার দৃষ্টি থেকে) মানুষটি এই জ্ঞান কোথা থেকে পেল? কে তাকে জানালো এই মহাবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব? এটা কি কোন ভিনগ্রহবাসী এলিয়েনের কাজ? কিন্তু তথাকথিত দালাল নাস্তিকরা তো এলিয়েনকেও বিশ্বাস করার কথা না, কারণ এলিয়েনের অস্তিত্বের কোন নির্ভরযোগ্য প্রমান এখনো কারো হাতে আসেনি। তাহলে কি নাস্তিকদের বাপ-দাদারা তাঁকে এটা শিখিয়ে দিয়ে এসেছে? কিন্তু তারা তো তখন দুনিয়ার দূরতম প্রান্তরে বসে কিভাবে আরো টাইট করে পাতা বাঁধতে হয় আর কিভাবে আরো বেশি বেশি বমি করে বেশি বেশি খাওয়া যায় তা আবিস্কারে ব্যস্ত। তাহলে কে দিলো এই জ্ঞান? তবে কি এটা সবশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, সর্বনিয়ন্ত্রক, সর্বশক্তিমান আল্লাহর পাঠানো বার্তা নয়?
যদি কোন নাস্তিকের কাছে যুক্তি ও প্রমান সহ উপযুক্ত উত্তর থাকে, তাহলে এই যুক্তি খন্ডন করে দেখাক।