প্রায় চার হাজার
বছর পূর্বে জনবসতি স্থাপিত হবার পরে কালের পরিক্রমায় হাজারো ঐতিহাসিক
ঘটনা,দুর্ঘটনা পার হয়ে আজকের "বাংলাদেশ"।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় আমাদের দেশও পরিবর্তিত হয়েছে সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটেছে আমাদের জাতি সত্তায়ও। এই সুদীর্ঘ ইতিহাসের সব চেয়ে সমৃদ্ধ, গতিশীল এবং তথ্যনির্ভর সময়টাশুরু হয়েছে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের আগমনের পরে। যে নতুন জগতের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে তা বাঙালি জাতি সভ্যতার বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবেই বিবেচিত। সভ্যতার এই নতুন দ্বার আধুনিক প্রজন্মকে আবদ্ধ করেছে অদৃশ্য এক সামাজিকবন্ধনে। আর এই বন্ধনের মুল বন্ধন শক্তি হিসেবে যে মাধ্যমটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেটি হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া। নব গঠিতএই জগৎটিকে বলা হয় ভার্চুয়াল জগৎ। ভার্চুয়াল জগতের আচার, আচারণ, কথাবর্তা অর্থাৎ সামগ্রিক কার্যক্রমকে বলা হয়ে থাকে ভার্চুয়াল লাইফ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, গুগল প্লাস, ভাইবার, ইনস্টাগগ্রাম, ব্লগ ও ফোরাম প্রভৃতি। এর মধ্যে প্রায় ৮০ লক্ষের ওপরে ব্যবহারকারী নিয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ভার্চুয়াল সোসাইটি গঠন করেছে মার্কিন তরুণ মার্ক জুকারবার্গ আবিষ্কৃত ফেসবুক। এছাড়া টুইটার ও ব্লগে রয়েছে বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের বিস্ময় সোস্যাল মিডিয়ার জগৎ এ সবথেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে তরুন প্রজন্ম। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পর্যন্ত তরুন-তরুনীরাই সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আসক্ত তবে বয়স্কদের সংখ্যাও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয় এবং তাও দিনদিন বেড়েই চলেছে। প্রজন্মের ভার্চুয়াল ঐকতানে প্রতিনিয়তই মুখরিত হচ্ছে ভার্চুয়ালপৃথিবী। এই ভার্চুয়াল পৃথিবীতে নতুন সম্পর্কের জন্ম হচ্ছে আবার তা ভেঙ্গেওযাচ্ছে, রাজনৈতিক আন্দোলন, সংগ্রাম, বিক্ষোভ, প্রেম, ভালোবাসা, সমালোচনা, আলোচনা, সাহিত্যচর্চাসব কিছুই হচ্ছে এখানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রধানত লিখিত বর্ণে ভাবপ্রকাশ করা হয়। এছাড়াও অডিও, ভিডিও বার্তা এবং বিভিন্ন ধরনের আবেগাশ্রিত সংকেতও ব্যবহার করা হয়। ছবি আদান-প্রদানও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
আমাদের বর্তমান বাংলাদেশে আশংকাজনক হারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তরুনদের আসক্তি কিংবা অংশগ্রহন বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সমাজের মধ্যে এক ধরনের বিবেধ দেখা দিয়েছে। একপক্ষ একে মাত্রই সময়ের অপচয় বলে দাবী করছে আরেক দল বিশ্বায়নের পৃথিবী যুক্ত হবারপ্রধান দ্বার হিসেবে দেখছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে।
দুটি দৃশ্যপট তুলে ধরছি এখানে, প্রথমটি ভার্চুয়ালাইজেশনের পূর্বের এবং পরেরটি বর্তমান ভার্চুয়াল পৃথিবীনিয়ে।
ভার্চুয়ালাইজেশনের পূর্বে-
আবগী জাত হিসেবে বাঙ্গাল জাতটার পরিচয় বিশ্বস্বীকৃত একইসাথে জাতিটা ঐতিহ্য গতভাবে বিপ্লবীও। ব্যক্তিজীবনে সেই বিপ্লব কিংবা আবেগের বহিঃপ্রকাশ বাথরুমের দেয়ালে প্রতিবাদ মুখর লেখালিখী থেকে শুরু করে সাফল্য দিয়ে বিশ্ব জয় পর্যন্ত সবকিছুতেই বিস্তৃত। আগে বাংলাদেশে কোন আলোচিত ঘটনা ঘটলে কিংবাকোন তরুন বিশ্ব অথবা বাংলাদেশকে তাক লাগিয়ে দেয়া কোন কাজ করলেও তাদের কাছের লোকগুলো অথবা নির্দিষ্ট বলয়ের মানুষগুলো ছাড়া তেমন কারো কাছে তাদের স্বীকৃতি,কর্মজজ্ঞের সংবাদ পৌছাতো না। তখনকার মেইন স্ট্রীম ছিলো প্রকৃত বীরেরা সবার অলক্ষ্যে থেকে যাবে। সচেতনতা কিংবা দেশপ্রেমের প্রশ্নে আগেকার তরুন প্রজন্মছিলো সত্যিকারেরস্বদেশপ্রেমী পুরোপুরি নন্দলালের মতোই ইস্পাত-কঠিন ছিলো তাদের প্রতিজ্ঞা। ব্যক্তি স্বার্থে আঘাত না হানলে তখনকার তরুন প্রজন্মখুব বেশি একটা আন্দোলন সংগ্রামেও জড়িত হত না। তবে বৃহৎ কিংবা জাতিগত স্বার্থের প্রশ্নে তাদের সমালোচনা-আলোচনা এখানে প্রসাংগিকও না। পাড়া, মহল্লা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়ের দোকানে বিবিসি বা ভয়েস অফ আমেরিকা শুনে চা খেতে খেতে পশ্চিমা আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্যের একনায়ক, বিশ্বরাজনীতি, দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকঅবস্থা, ধান-চালের দাম,ম্যারাডোনা-পেলে ইত্যাদি নিয়ে ব্যপক আলোচনার পরে বাড়িফিরতেন রাজ্জাক-শাবানা কিংবা উত্তম-সুচিত্রার নতুন ছবির খবর নয়তো ইংল্যান্ডের রাণীর পুত্রবধূর চরিত্রবিশ্লেষণ করতে করতে। এই দল বন্ধুমহলে জ্বালাময়ী কথাবর্তা বলেই ক্ষান্ত হতেন। তবে তখনও কিছু মাথানষ্ট-আবেগী ছাত্র-যুবক রাস্তায় নেমে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পাড়ায়-পাড়ায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো-আত্নাহুতি দিতো। কিন্তু তাদের আন্দোলন সংগ্রামকয়েক জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। নন্দলালের দলের বোধোদয় কিংবা সংগ্রামীচ্ছুমফস্বলে বসবাসকারী দলকে তাদের দলে ভেরানোর মতো প্রচারনার সুযোগ তখন তেমন একটা ছিলোনা। নাম মাত্র কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকায় শুধু মাত্র সাড়া জাগানো তরুন কবিসাহিত্যিকের লেখাই প্রকাশ হতো। আর নিজের ডায়েরীতে লেখা অখ্যাত তরুনের কবিতাপ্রেমিকাকে শোনানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতো। দেয়ালে চীকা মেরে, পোষ্টার সেঁটে অথবামাইকিং করে সবার কাছে জাতীয় কোন ইস্যুতে আয়োজিত মানববন্ধনে সর্বোচ্চ সংখ্যক তরুনেরঅংশগ্রহণ নিশ্চিতকরা আসলেই অসম্ভব ছিলো। রাজনৈতিকপরিভাষা ব্যবহারেও বাংলাদেশের তরুণেরা তেমন এগিয়ে ছিল না। বিশাল একটা গোষ্ঠি I hate politics নিতীতেই বিশ্বাসী ছিলো। সচেতনাতাবোধ জাগ্রত করতে একটিসংবাদ সকলের কাছে পৌছে দিতে রেডিও,টেলিভশন কিংবা সংবাদপত্র চাইলেও একশ শতাংশ সফলতাঅর্জন করতে পারতো না কারন একটা গোষ্ঠী সংবাদ বলতেই বিমুখ ছিলো।
ভার্চুয়ালাইজেশনের পরে-
বাঙ্গালির আবেগটা চিরন্তন সেটা কোনো ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাবেও পরিবর্তিত হবার নয়সাথে সাথে বৈপ্লবিক মানসিকতাও একই রকমেরই চিরকাল। দিন বদল হওয়ার সাথে সাথে বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, হয়েছে আরও বেশি প্রকাশ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে বিপ্লব জনে জনে ছড়িয়ে দেয়া এখন অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন একটি বিপ্লবের ডাক দেয়া অনেক বেশি সহজ ফেসবুক ব্লগে অহরহ বিপ্লব হচ্ছে। ২০১৩-এর ফেব্রুয়ারিতে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ এরপ্রকৃত উদাহরন।
যেহেতু প্রশ্নটি প্রজন্মের অবক্ষয় এবং তারুন্য নিয়ে আর এরাই ভার্চুয়াল পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা সুতারং একটি বাস্তবিক উদাহরন দিয়ে প্রকৃত প্রেক্ষাপট পরিস্কার করাযাক। সময়টা ২০০৫ কিংবা ২০০৬ সাল; বরিশালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রহিমের মা ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগে ভর্তি। তার একটি জরুরী অপারেশন হবে এবং সে জন্যে তিন-চার ব্যাগরক্ত দরকার। ব্লাড ব্যংক খুজে খুজেও রক্ত পাওয়া গেলো না। অপরিচিত শহর ঢাকায় রহিমের কোন আত্নীয়ও নেই যে সে কোন ভাবে রক্ত জোগার করবে।রহিমের মা রক্তের অভাবে.........এবার ২০১৫ সালে রহিমকে কল্পনা করা যাক রহিমের মা হাসপাতালে ভর্তি , জরুরী রক্তদরকার। কোথাও রক্ত খুজে না পেয়ে রহিম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো জরুরী রক্ত দরকার একইভাবে কয়েকটি ব্লাড ডোনেট ফেসবুক গ্রুপে পোষ্টও দি। এক-দুই না অনেক ব্যাগ রক্ত দিতেরহিমের কাছে তারুন্যের ভীড়।
যদিস্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কথা বলা হয় সে জন্যে এখন ফেসবুক কিংবা ব্লগের বিশালদুনিয়া খোলা রয়েছে। এখন আর সাহিত্য পত্রিকার সল্পতায় সাহিত্যিকের অপমৃত্যু ঘটে না।ফেসবুক, ব্লগে শত-শত কবি, সাহিত্যিক অহরহই দেখা যাচ্ছে। দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিকইস্যুতে এখন চাইলে ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খুলেই হাজার-হাজার তরুন একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছে, বিক্ষোভে সামিল হচ্ছে আবার কোন দুস্থদের সাহায্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে ও ব্লগে রাজনীতি নিয়ে প্রচুর আলোচনাহচ্ছে। একইসঙ্গে কঠিন ও আক্রমণাত্মক ভাষায় দেশের দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলের সমালোচনা চোঁখে পড়ার মতো।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় আমাদের দেশও পরিবর্তিত হয়েছে সাথে সাথে পরিবর্তন ঘটেছে আমাদের জাতি সত্তায়ও। এই সুদীর্ঘ ইতিহাসের সব চেয়ে সমৃদ্ধ, গতিশীল এবং তথ্যনির্ভর সময়টাশুরু হয়েছে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের আগমনের পরে। যে নতুন জগতের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে তা বাঙালি জাতি সভ্যতার বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবেই বিবেচিত। সভ্যতার এই নতুন দ্বার আধুনিক প্রজন্মকে আবদ্ধ করেছে অদৃশ্য এক সামাজিকবন্ধনে। আর এই বন্ধনের মুল বন্ধন শক্তি হিসেবে যে মাধ্যমটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সেটি হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া। নব গঠিতএই জগৎটিকে বলা হয় ভার্চুয়াল জগৎ। ভার্চুয়াল জগতের আচার, আচারণ, কথাবর্তা অর্থাৎ সামগ্রিক কার্যক্রমকে বলা হয়ে থাকে ভার্চুয়াল লাইফ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, গুগল প্লাস, ভাইবার, ইনস্টাগগ্রাম, ব্লগ ও ফোরাম প্রভৃতি। এর মধ্যে প্রায় ৮০ লক্ষের ওপরে ব্যবহারকারী নিয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ভার্চুয়াল সোসাইটি গঠন করেছে মার্কিন তরুণ মার্ক জুকারবার্গ আবিষ্কৃত ফেসবুক। এছাড়া টুইটার ও ব্লগে রয়েছে বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারী। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের বিস্ময় সোস্যাল মিডিয়ার জগৎ এ সবথেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে তরুন প্রজন্ম। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পর্যন্ত তরুন-তরুনীরাই সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আসক্ত তবে বয়স্কদের সংখ্যাও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয় এবং তাও দিনদিন বেড়েই চলেছে। প্রজন্মের ভার্চুয়াল ঐকতানে প্রতিনিয়তই মুখরিত হচ্ছে ভার্চুয়ালপৃথিবী। এই ভার্চুয়াল পৃথিবীতে নতুন সম্পর্কের জন্ম হচ্ছে আবার তা ভেঙ্গেওযাচ্ছে, রাজনৈতিক আন্দোলন, সংগ্রাম, বিক্ষোভ, প্রেম, ভালোবাসা, সমালোচনা, আলোচনা, সাহিত্যচর্চাসব কিছুই হচ্ছে এখানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রধানত লিখিত বর্ণে ভাবপ্রকাশ করা হয়। এছাড়াও অডিও, ভিডিও বার্তা এবং বিভিন্ন ধরনের আবেগাশ্রিত সংকেতও ব্যবহার করা হয়। ছবি আদান-প্রদানও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।
আমাদের বর্তমান বাংলাদেশে আশংকাজনক হারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তরুনদের আসক্তি কিংবা অংশগ্রহন বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সমাজের মধ্যে এক ধরনের বিবেধ দেখা দিয়েছে। একপক্ষ একে মাত্রই সময়ের অপচয় বলে দাবী করছে আরেক দল বিশ্বায়নের পৃথিবী যুক্ত হবারপ্রধান দ্বার হিসেবে দেখছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে।
দুটি দৃশ্যপট তুলে ধরছি এখানে, প্রথমটি ভার্চুয়ালাইজেশনের পূর্বের এবং পরেরটি বর্তমান ভার্চুয়াল পৃথিবীনিয়ে।
ভার্চুয়ালাইজেশনের পূর্বে-
আবগী জাত হিসেবে বাঙ্গাল জাতটার পরিচয় বিশ্বস্বীকৃত একইসাথে জাতিটা ঐতিহ্য গতভাবে বিপ্লবীও। ব্যক্তিজীবনে সেই বিপ্লব কিংবা আবেগের বহিঃপ্রকাশ বাথরুমের দেয়ালে প্রতিবাদ মুখর লেখালিখী থেকে শুরু করে সাফল্য দিয়ে বিশ্ব জয় পর্যন্ত সবকিছুতেই বিস্তৃত। আগে বাংলাদেশে কোন আলোচিত ঘটনা ঘটলে কিংবাকোন তরুন বিশ্ব অথবা বাংলাদেশকে তাক লাগিয়ে দেয়া কোন কাজ করলেও তাদের কাছের লোকগুলো অথবা নির্দিষ্ট বলয়ের মানুষগুলো ছাড়া তেমন কারো কাছে তাদের স্বীকৃতি,কর্মজজ্ঞের সংবাদ পৌছাতো না। তখনকার মেইন স্ট্রীম ছিলো প্রকৃত বীরেরা সবার অলক্ষ্যে থেকে যাবে। সচেতনতা কিংবা দেশপ্রেমের প্রশ্নে আগেকার তরুন প্রজন্মছিলো সত্যিকারেরস্বদেশপ্রেমী পুরোপুরি নন্দলালের মতোই ইস্পাত-কঠিন ছিলো তাদের প্রতিজ্ঞা। ব্যক্তি স্বার্থে আঘাত না হানলে তখনকার তরুন প্রজন্মখুব বেশি একটা আন্দোলন সংগ্রামেও জড়িত হত না। তবে বৃহৎ কিংবা জাতিগত স্বার্থের প্রশ্নে তাদের সমালোচনা-আলোচনা এখানে প্রসাংগিকও না। পাড়া, মহল্লা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়ের দোকানে বিবিসি বা ভয়েস অফ আমেরিকা শুনে চা খেতে খেতে পশ্চিমা আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্যের একনায়ক, বিশ্বরাজনীতি, দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকঅবস্থা, ধান-চালের দাম,ম্যারাডোনা-পেলে ইত্যাদি নিয়ে ব্যপক আলোচনার পরে বাড়িফিরতেন রাজ্জাক-শাবানা কিংবা উত্তম-সুচিত্রার নতুন ছবির খবর নয়তো ইংল্যান্ডের রাণীর পুত্রবধূর চরিত্রবিশ্লেষণ করতে করতে। এই দল বন্ধুমহলে জ্বালাময়ী কথাবর্তা বলেই ক্ষান্ত হতেন। তবে তখনও কিছু মাথানষ্ট-আবেগী ছাত্র-যুবক রাস্তায় নেমে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পাড়ায়-পাড়ায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতো-আত্নাহুতি দিতো। কিন্তু তাদের আন্দোলন সংগ্রামকয়েক জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। নন্দলালের দলের বোধোদয় কিংবা সংগ্রামীচ্ছুমফস্বলে বসবাসকারী দলকে তাদের দলে ভেরানোর মতো প্রচারনার সুযোগ তখন তেমন একটা ছিলোনা। নাম মাত্র কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকায় শুধু মাত্র সাড়া জাগানো তরুন কবিসাহিত্যিকের লেখাই প্রকাশ হতো। আর নিজের ডায়েরীতে লেখা অখ্যাত তরুনের কবিতাপ্রেমিকাকে শোনানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতো। দেয়ালে চীকা মেরে, পোষ্টার সেঁটে অথবামাইকিং করে সবার কাছে জাতীয় কোন ইস্যুতে আয়োজিত মানববন্ধনে সর্বোচ্চ সংখ্যক তরুনেরঅংশগ্রহণ নিশ্চিতকরা আসলেই অসম্ভব ছিলো। রাজনৈতিকপরিভাষা ব্যবহারেও বাংলাদেশের তরুণেরা তেমন এগিয়ে ছিল না। বিশাল একটা গোষ্ঠি I hate politics নিতীতেই বিশ্বাসী ছিলো। সচেতনাতাবোধ জাগ্রত করতে একটিসংবাদ সকলের কাছে পৌছে দিতে রেডিও,টেলিভশন কিংবা সংবাদপত্র চাইলেও একশ শতাংশ সফলতাঅর্জন করতে পারতো না কারন একটা গোষ্ঠী সংবাদ বলতেই বিমুখ ছিলো।
ভার্চুয়ালাইজেশনের পরে-
বাঙ্গালির আবেগটা চিরন্তন সেটা কোনো ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাবেও পরিবর্তিত হবার নয়সাথে সাথে বৈপ্লবিক মানসিকতাও একই রকমেরই চিরকাল। দিন বদল হওয়ার সাথে সাথে বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, হয়েছে আরও বেশি প্রকাশ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে বিপ্লব জনে জনে ছড়িয়ে দেয়া এখন অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন একটি বিপ্লবের ডাক দেয়া অনেক বেশি সহজ ফেসবুক ব্লগে অহরহ বিপ্লব হচ্ছে। ২০১৩-এর ফেব্রুয়ারিতে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ এরপ্রকৃত উদাহরন।
যেহেতু প্রশ্নটি প্রজন্মের অবক্ষয় এবং তারুন্য নিয়ে আর এরাই ভার্চুয়াল পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা সুতারং একটি বাস্তবিক উদাহরন দিয়ে প্রকৃত প্রেক্ষাপট পরিস্কার করাযাক। সময়টা ২০০৫ কিংবা ২০০৬ সাল; বরিশালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রহিমের মা ঢাকা মেডিকেলের জরুরী বিভাগে ভর্তি। তার একটি জরুরী অপারেশন হবে এবং সে জন্যে তিন-চার ব্যাগরক্ত দরকার। ব্লাড ব্যংক খুজে খুজেও রক্ত পাওয়া গেলো না। অপরিচিত শহর ঢাকায় রহিমের কোন আত্নীয়ও নেই যে সে কোন ভাবে রক্ত জোগার করবে।রহিমের মা রক্তের অভাবে.........এবার ২০১৫ সালে রহিমকে কল্পনা করা যাক রহিমের মা হাসপাতালে ভর্তি , জরুরী রক্তদরকার। কোথাও রক্ত খুজে না পেয়ে রহিম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো জরুরী রক্ত দরকার একইভাবে কয়েকটি ব্লাড ডোনেট ফেসবুক গ্রুপে পোষ্টও দি। এক-দুই না অনেক ব্যাগ রক্ত দিতেরহিমের কাছে তারুন্যের ভীড়।
যদিস্বাধীনভাবে মত প্রকাশের কথা বলা হয় সে জন্যে এখন ফেসবুক কিংবা ব্লগের বিশালদুনিয়া খোলা রয়েছে। এখন আর সাহিত্য পত্রিকার সল্পতায় সাহিত্যিকের অপমৃত্যু ঘটে না।ফেসবুক, ব্লগে শত-শত কবি, সাহিত্যিক অহরহই দেখা যাচ্ছে। দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিকইস্যুতে এখন চাইলে ফেসবুকে একটা ইভেন্ট খুলেই হাজার-হাজার তরুন একত্রিত হয়ে আন্দোলন করছে, বিক্ষোভে সামিল হচ্ছে আবার কোন দুস্থদের সাহায্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে ও ব্লগে রাজনীতি নিয়ে প্রচুর আলোচনাহচ্ছে। একইসঙ্গে কঠিন ও আক্রমণাত্মক ভাষায় দেশের দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলের সমালোচনা চোঁখে পড়ার মতো।