Thursday, September 10, 2015

নাস্তিকদের জন্যঃ-

নাস্তিকতা বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়, মানব জাতির ধর্মীয় অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই একদল মানুষ আল্লাহকে "রব" হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে তারা প্রকৃতিবাদী হয়েছে। হুদ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জাতির মধ্যে এই জাতীয় চিন্তা-ভাবনা বিরাজমান ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। জীবন ও জগত সম্পর্কে তাদের ধারণার বহিঃপ্রকাশ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
তারা বলতোঃ
“( তারা বলে, কিসের আবার পুনরুত্থান) দুনিয়ার জীবনইতো হচ্ছে আমাদের একমাত্র জীবন, আমরা (এখানে) মরবো, (এখানেই) বাঁচবো, আমাদের কখনই পুনরুত্থিত করা হবে না"। (সূলা আল-মুমিনূন : ৩৭)

বর্তমানে সময়ে বিশ্বে এদের উত্তরসূরীদের অভাব নেই। কিন্ত জ্ঞানের এ অভিনব অগ্রগতির যুগে একদল চিন্তাশীল মানুষ যেমন আল্লাহকেই তাদের 'রব' বলে স্বীকার করে নিচ্ছে, তেমনি আরেকদল মানুষ আল্লাহকেই অস্বীকার করে বলেছে- আল্লাহ বলতে কিছুই নেই। এ জগত মহা বিস্ফোরণের ফল। আল্লাহ বলতে কেউ এসব সৃষ্টি করেনি; বরং মানুষই আল্লাহকে সৃষ্টি করেছে।
পূর্বের কুরআন অবিশ্বাসীরা কুরআন সম্পর্কে যা বলতো:
“আমরা চাইলে এধরণের কথাতো নিজেরাও বলতে পারি, এগুলো তো আগের লোকদের উপকথা ছাড়া আর কিছুই নয়”। (সূরা আল আনফাল : ৩১)

বর্তমান সময়ে নাস্তিকরা এই কথাগুলোই বলে থাকে।
নবীরা যখন অবিশ্বাসীদের এক আল্লাহর দিকে ডাকতো তখন তার জবাবে তারা বলতো:
“আমরা তো দেখছি যে, তুমি সুস্পষ্ট গুমরাহীতে লিপ্ত রয়েছ” (সূরা আল আ’রাফ: ৬০)
“আমরা তো তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত মনে করি” (সূরা আল আ’রাফ: ৬৭)
“তোমরা যা মেনে নিয়েছ আমরা তা অস্বীকার করি, অমান্য করি” (সূরা আল আ’রাফ: ৭৬)
কেউ যদি বর্তমানে কোন নাস্তিককে আল্লাহর দাসত্ব কবুল করে নেওয়ার কথা বলে তখন তারা এই কথাগুলোই বলে থাকে যেমন: তোমরা বোকা, তোমরা যা মান আমরা তার অস্বীকার করি।

হঠকারিতা বক্তব্য হিসেবে তারা যা বলতো:
“আচ্ছা, তাহলে নিয়ে আস সেই আযাব, যার তুমি আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ”। (সূরা আল আরাফ: ৭০)
আযাবের ভয় দেখালে বর্তমান সময়ের নাস্তিকরা বলে থাকে, আযাব যদি সত্যিই থাকতো তাহলে তা আমাদের পাকড়াও করে না কেন?

যারা আল্লাহতে বিশ্বাসী তাদের বিরুদ্ধে তারা যা বলতো:
“এই লোকদিগকে তো এদের দ্বীন (ধর্ম) ধোকার কবলে নিক্ষিপ্ত করেছে” (সূরা আল আনফাল: ৪৯)
আল্লাহতে বিশ্বাসীদের এরা বোকা এবং ধোকার কবলে নিক্ষিপ্ত রয়েছে বলে একই মন্তব্য করে যাচ্ছে।
শুধু পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু অবিশ্বাসী উত্তরসুরীদের কথাগুলো একই রয়ে গেছে। যেমন: ফিরাউন সুউচ্চ প্রাসাদ বানিয়ে তাতে আরোহন করে মূসা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিল, কই তোমার আল্লাহ, তাকে তো খুজে পেলাম না, ঠিক একই কথা বলেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক নিক্ষেপ করার পর, তারা বলেছিল, কই তোমাদের আল্লাহ, তাকে তো খুজে পেলাম না।
এখন দেখুন তো এই দুই শক্তির কোনটি টিকে আছে?

নাস্তিক ভাইদের কাছে কিছু প্রশ্নঃ-
আস্তিক নাস্তিক তর্ক বিতর্ক চলছেই। এসবের মাঝে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে আবার অনেক কিছু জানাও যাচ্ছে এবং ভুল শোধরানো যাচ্ছে। কিন্তু এসব তর্কের প্রায় সবগুলোই ইসলাম, কোরআন এবং হাদিস অথবা ইসলামের কোন আইন নিয়ে, যার সবটাই আস্তিকের বিশ্বাসের ভিত্তি। কিন্তু নাস্তিকের বিশ্বাসের ভিত্তি কি? এটা নিয়ে কেন কোনো আলোচনা হয় না? উনাদের প্রশ্ন করলেও উনারা পাল্টা প্রশ্ন করে এরিয়ে যান। প্রশ্নের সোজা সরল উত্তর দেন না। শুধু অন্যের বিশ্বাসের ভুল ধরলে ত হবে না, নিজের বিশ্বাসটাও তো তুলে ধরতে হবে। কিন্তু তেমন কিছু দেখছিনা। তাই নিজেই নাস্তিক ভাইদের কাছে প্রশ্ন করছি। কারন উনাদের বিশ্বাস সম্পর্কে আমার জানতে ইচ্ছে করছে। আশা করি উনারা পাল্টা প্রশ্ন না করে সহজ সরল ভাবে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন। প্রশ্ন গুলো হচ্ছেঃ-
১) আপনাদের বিশ্বাসের ভিত্তি বা মূলকথা কি?
২)আপনি কি আপেক্ষিক নৈতিকতায় বিশ্বাস করেন নাকি পরম নৈতিকতায়? বুঝিয়ে বলছি, আপনি কি বিশ্বাস করেন একজন মানুষের চারপাশ, সমাজব্যবস্থা,পরিবার ইত্যাদি তার মধ্যে নৈতিকতার সৃষ্টি করে এবং গড়ে তোলে? যদি তেমনটিই হয় তাহলে কিন্তু আপনি একটি বিশ্বাসে থেকে অন্য বিশ্বাস কে বিচার করতে পারেন না। কারণ আপনার এখনকার সমাজ ব্যাবস্থার ফলে যে নৈতিকতা গড়ে উঠেছে তা চীন বা আফ্রিকায় থাকা একজন লোকের চেয়ে আলাদা। আপনার কাছে যেটি ভাল তা ঐ লোকটির কাছে নাও হতে পারে। তাই একটি বিশ্বাসে থেকে অন্য বিশ্বাসের ভুল ধরতে যাওয়া টি বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তার বিশ্বাসের ভুল বের করতে হলে আপনাকে তার বিশ্বাসের মূলনীতি গুলো মেনে নিতে হবে অথবা বুঝতে হবে, বিচার করতে হবে।
আবার,
আপনি যদি পরম নৈতিকতায় বিশ্বাস করেন , মানে, আপনি যদি বিশ্বাস করে যে নৈতিকতা জন্ম থেকেই মানুষের মধ্যেই থাকে অর্থাৎ মানুষ নিজেই ঠিক করতে পারে কোনাটা সঠিক কোনটা খারাপ এবং চারপাশের সমাজব্যবস্থা সেটাকে ঠিক ভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে তাহলে একটা প্রশ্ন এসে যায় যে এই নৈতিকতা কথা থেকে আসে? কিভাবে এর সৃষ্টি? মানুষের মধ্যে কি আছে যেটা ভাল মন্দ সঠিক ভুল এসব নির্ণয় করে?
৩) আপনার বিশ্বাসের ভিত্তি যদি ডারউইন তত্ত্ব হয় তাহলে আরও কিছু প্রশ্ন এসে যায়। তা হচ্ছে, প্রথম জৈব কোষের সৃষ্টি কিভাবে? বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত কি কো জৈব বস্তুর বা প্রানের সাহায্য ছাড়া পরীক্ষাগারে অজৈব থেকে প্রান কোষের বা প্রানের সৃষ্টি করতে পেরেছে? না পারলে আপনি কিভাবে বিশ্বাস করেন যে অজৈব বস্তু থেকে প্রানের সৃষ্টি? তাহলে এটি কি আপনার অন্ধ বিশ্বাস নয়?
৪) যদি পরকাল বলে কিছু না থাকে যেখানে আমাদের ভাল কাজের পুরস্কার এবং মন্দ কাজের শাস্তি দেয়া হবে তাহলে মৃত্যুর পর হিটলার, মাদার তেরেসা এবং একটি কুকুরের মধ্যে পার্থক্য কথায়? কেন আমি ভাল কাজ করব ভাল থাকব যেখানে খারাপ কাজ অথবা অসাদুপায় অবলম্বন করে বেশী অর্থ উপার্জন এবং আয়েশি জীবন যাপন করতে পারি?
৫) একজন স্মাগ্লার অথবা সন্ত্রাসিকে কিভাবে আপনি বুঝাবেন যে সে যা করছে তা খারাপ এবং এতে তার ক্ষতি হতে পারে? (ধরুন আইন সে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে এবং সে বডি গার্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে, যেটা সচরাচর ঘটছে এখন)
৬) একজন লোক ১০০ টি খুন করে ফাঁসির শাস্তি পেল আর আরেকজন একই শাস্তি পেল ১ টি খুন করে। এটি কি গ্রহণযোগ্য আপনার কাছে? কারন আমি বিশ্বাস করি একমাত্র আল্লাহই পারেন তাকে পরকালে যতবার প্রয়োজন ততবার জীবিত করে মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করাতে। এটিই আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়।
আশাকরি আমি এই প্রশ্নগুলোর সহজ সরল উত্তর নাস্তিক ভাইদের কাছে পাব। ধন্যবাদ।