১ ক্যালকুলাস, প্রথম পর্ব (অস্তিত্বের শেকড় সন্ধানী)
২ ক্যালকুলাস, ২য় পর্ব (সীমার একটা ফাজলামি আছে !)
৩ ক্যালকুলাস, তৃতীয় পর্ব (বিন্দু এবং অসীমের গল্প)
ক্যালকুলাস, প্রথম পর্ব (অস্তিত্বের শেকড় সন্ধানী) https://blog.mukto-mona.com/2015/08/28/47458/#i
ক্যালকুলাস বিশ্লেষণী জ্যামিতির একটি শাখা। এবং সবচাইতে সমৃদ্ধশীল অধ্যায়এর নাম । গণিত আর বিজ্ঞানের কত সমস্যা যে এটা দিয়ে সমাধান করা গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। পদার্থবিদ্যার প্রায় সব থিওরিয়ের ভিত্তি বলতে গেলে এই ক্যালকুলাসই। এক কথায় বলা যায়, ক্যালকুলাসের অবদানের কথা বলে শেষ করা সম্ভব না।
কিন্তু এখনও ক্যালকুলাস কি সেটাই তো জানা গেল না। সমস্যা নেই। শুরু করছি। অন্তত এতটুকু তো বোঝা গেল যে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং শিখলে খুব একটা ভুল হবে না,উপকার ছাড়া।
ক্যালকুলাস জানার জন্য একটা প্রয়োজনীয় বিষয় জেনে নিতে হবে যার নাম – লিমিট। লিমিট আসলে কি?
লিমিট আবার কি? সীমা।
মনে করুন, কিছু দিন আগে আপনাকে একজন বলল, খাওয়ার একটা সীমা আছে। এর মানে আসলে কি ?
মানে হচ্ছে, আপনি যেই পরিমানে খানা পিনা শেষ করছেন সেটা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বাড়তে বাড়তে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের যদি বেশি হয়ে যায় তবে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারে ! হয়ত আপনি ফুটে বাস্ট হয়ে যেতে পার, অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কারনে তাই আগে থেকেই সাবধান বানী। – খাওয়ার একটা সীমা আছে।
গনিতেও গণিতবিদরা এরকম কিছু জায়গা আছে, এরকম কিছু কাজ আছে যেগুলো করার আগে আপনাকে সাবধান করে দেবে । খবরদার ! সীমা অতিক্রম কর না । ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাবে।
একটা উদাহরণ দেই – মনে করুন একটা ফাংশন আছে –
F(x) = \{(x+3). (x-3)\} / (x-3)
উপরে একটা ফাংশন দেখছি? এখানে f(x) এ x এর জায়গায় বিভিন্ন মান কিংবা সংখ্যা বসিয়ে আমরা নতুন নতুন সংখ্যা পাব। মনে রাখুন এটা কিন্তু ফাংশন। এটা কোন সমীকরণ নয় যে এখানে x এর একটা বা দুইটা মান থাকবে। এখানে x এর জায়গায় অসীম সংখ্যক মান বসতে পারে। আচ্ছা আমরা এই ফাংশনের একটা ছক তৈরি করি না কেন?
x F(x) = \{(x+3). (x-3)\} / (x-3)
0 3
1 4
2 5
3 !?!
1 2
5 8
-4 -1
এখানে আমি x এর মাঝে এলোপাতারি কতগুলো মান বসিয়েছি । যার কারনে F(x) এর বিভিন্ন মান পেয়েছি। তাই না? কিন্তু x এর মাঝে একটা মান আমি বেশ সচেতনভাবেই বসিয়েছি। সেটা হচ্ছে 3 । কারণ আমি জানতাম x এর মাঝে 3 বসালে কেলেঙ্কারি কিছু হবে। আর তাইই হয়েছে। এই যে কেলেঙ্কারির চিহ্ন !? !
কারণ ফাংশনে 3 বসাবার আগেই অনেকে ফাংশনটাকে সুন্দর করবার জন্যে উপরে নিচে (x-3) কাটাকাটি করে দিতে পারে। এরপরে বাকি থাকবে শুধু মাত্র (x=3)। তো এখন x এরজায়গায় ৩ বসিয়ে দিলেই চলে। তবে ফাংশনের মান হবে ৬ । হয়েই তো গেল।
কিন্তু না আপনি সেটা করতে পারেন না। আপনি যখন ধরে নিচ্ছেন x এর মান 3 বসাবেন তখন কিন্তু ভুলেও (x-3) কাটাকাটি করতে পারবেন না। এটা কাটাকাটি করার অর্থ আপনি শূন্যকে শুন্য দিয়ে ভাগ করছেন। যেটা আসলে গণিতের ভাষায় একটা কেলেঙ্কারি।
০ কে ০ দিয়ে ভাগ করলে বা কাটাকাটি করলে কি ধরনের ভয়ানক জিনিস হতে পারেন একটু দেখুন –
X = Y
XY = Y^2
দুই পাশে X^2 বিয়োগ করে পাই –
XY - X^2 = Y^2 - X^2
X(Y - X) = (Y+X)(Y-X)
এখন দুই পাশ থেকে ( Y - X ) কাটাকাটি করে ফেললে বাকি থাকে,
X = X + Y
যেহেতু X = Y কাজেই Y এর জায়গায় X লিখে পাই-
X = X + X
অর্থাৎ, X = 2X
অর্থাৎ, 1 = 2
কি ভয়ানক কথা !
আসলে এখানে, X = Y
তাই
X-Y=X-X=O
সুতরাং দুই পাশ থেকে X-Y কাটাকাটি করলে সেটা অংকের ভাষায় অনির্ণেয় হবে। আর এই সমস্ত অনির্ণেয় সংখ্যাকে আমরা কখনও নির্ণয় করতে পারি না। ( ক্যালকুলাস জানার আগে পর্যন্ত এটাই বিশ্বাস করে নিতে হবে )
তার মানে আমরা কিন্তু F(x) এর ক্ষেত্রে একটা জিনিস বলে দিতে পারি। তুমি x এর ক্ষেত্রে যেকোনো মান নিতে পার, সব, মান গ্রহণ করতে পার। কিন্তু এই, ভুল করেও তিনের ধারে কাছে যাবে না। 3 হচ্ছে তোমার সীমা। অর্থাৎ তুমি সব সংখ্যা নিতে পার, সবখানে যেতে পার, কিন্তু ভুলেও ৩ এর ধারে কাছে যাবে না !
অর্থাৎ আমাদের শুধু খাওয়া দাওয়া, দুষ্টামি কিংবা লুচ্চামির ক্ষেত্রেই নয় গণিতের ক্ষেত্রেও সীমা নামের একটা ব্যাপার আছে। আজকে এখানেই থাক এক দিনে এর চাইতে বেশি আর লিখতে চাচ্ছি না। তবে এরপরের পর্বে আমরা সীমার একটা সার্বজনীন সংজ্ঞা দেব। ফাংশনের সীমা কি করে বার করতে হয় সেটাও শিখব। এবং দেখব সব কিছুর আসলে সীমা নাও থাকতে পারে !
২য় পর্ব ক্যালকুলাস, (সীমার একটা ফাজলামি আছে !) https://blog.mukto-mona.com/2015/08/28/47458/#i-2
ক্যালকুলাস নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে ফিরে এলাম। এর আগের অধ্যায়ে আমরা কি দেখেছি? ০/০ এটা আসলে অনির্ণেয়। এর মান বের করা সম্ভব না। আচ্ছা আমরা গনিতে দুইটি শব্দ খুব বেশি করে শুনি, অসঙ্গায়িত আর অনির্ণেয় তাই না? কিন্তু এই শব্দ দুইটির আসল অর্থই কি আর এদের মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে? শাব্দিক দিক থেকে তো এদের অর্থ প্রায় কাছাকাছি মনে হয়। কিন্তু না, আসলে এদের মাঝে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।
অসঙ্গায়িতঃ গণিতের যেই ক্যাল্কুলেশন কে আসলে কোন সংজ্ঞাতেই ফেলা যায় না সেটাই অসঙ্গায়িত।
প্রথমে বলে নেই এখানে অপারেশন বলতে আমরা যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগের কথা বলব।
আমরা যদি একটু লক্ষ করি তবে দেখতে পাব যে গণিতের প্রত্যেকটি অপারেশনের একটি ইউনিক মানে আছে। মনে করা যাক ৫+৬ এর মান কত, ১১। তাই না? কিন্তু আপনি কি কখনও ৫+৬ এর ১১ বাদে অন্য কোন মান পাবেন? পাবেন না। এই অপারেশনটির একটিই মান। প্রতিটি অপারেশনের ক্ষেত্রে অঙ্কে এরকম ইউনিক মান পাওয়া যায়। আবার ২/৪ সমান কত .৫ তাই না? কিন্তু আপনার পক্ষে কি ২/৪ এর .৫ বাদে অন্য কোন মান বা ফলাফল পাওয়া সম্ভব। আসলে আদৌ কখনও সম্ভব না। প্রতিটি অপারেশনের শুধু একটি ও কেবলমাত্র একটিই মান পাওয়া যাবে। এই কারনেই এই মানকে আমরা এখানে ইউনিক ভ্যেলু নাম দিচ্ছি।
এখন মনে করুন কখনও যদি দেখেন একটা অপারেশনের কোন ইউনিক মান নেই, বরং দুই তিনটা মান চলে আসছে তখনই সেটা হবে অসঙ্গায়িত। অর্থাৎ যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগের মত কোন অপারেশনে যদি একের অধিক মান চলে আসে তখনি তাকে অসঙ্গায়িত বলা হয়। যেমন ৫+৬ = ১১ আবার আরেকবার আসছে ৫+৬ = ১৩।
তার মানে যাহাই এগার তাহাই তের? আসলে উপরের এই ক্ষেত্রটা কখনও সম্ভব না। কখনও এরকম হতে পারে না, কারন ৫+৬ এর সবসময়ই একটা ইউনিক মান আসবে যদি ভুল না করে থাকেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্র আছে এই সমস্ত অপারেশনের ক্ষেত্রে যেখানে ইউনিক মান আসে না, তাই অসাঙ্গায়িত হয়। কারন একাধিক মান সেখানে তৈরি হয়।
যেমন, একটা উদাহরণ দেই ১/০ সমান কত?
কেউ কেউ হয়ত অপারেশনটা দেখেই দুম করে বলে দেবেন, পাগল না কি? এটা তো অসঙ্গায়িত ! এর আবার মান আসে কি করে? কিন্তু কেন এটা অসঙ্গায়িত সেটা কি আমরা জানি। তাই দেখব, যে কেন অসঙ্গায়িত?
আচ্ছা আমরা তো সরাসরি ০ দিয়ে কিছুকে ভাগ করতে পারি না, তাই একটা বিকল্প পদ্ধতি বের করবার চেষ্টা করব। একটু ভিন্ন কায়দায়, কিছু করা যায় না কি। আচ্ছা 1/n এ একের নিচে n এর জায়গায় দুই বসালে কত হয়? .৫। এরপরে ৩ বসালে হয় ০.৩। এখন একটা উলটা কাজ করি। বরং ১ কে তার চাইতে ছোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করি। ১ কে .৫ দিয়ে ভাগ করলে হয় ২। নিচের চার্টটা দেখি
chart
আমরা কি চার্টটার মাঝে একটা জিনিস লক্ষ করেছি? যতই n এর মান ০ এর কাছাকাছি যাচ্ছে, ছোট হচ্ছে, 1/n এর মান ততই অসীমের দিকে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি ১ এর মান ০ এর একেবারে কাছাকাছি এসে পরলে 1/n এর মান ধনাত্মক অসীমের দিকে চলে যাবে। সারাংশ হিসেবে বলতে পারি ১/০ এর আসন্ন মান ধনাত্মক অসীম।
তো এখন কেউ যদি বলে যে 1/n এর বেলায় আপনি তো ০ এর কাছে ধনাত্মক দিক থেকে এগিয়েছেন। .00000001, .000000001 এরকম করে এগিয়েছেন, তাই পেয়েছেন ধনাত্মক অসীম। কিন্তু আপনি যদি ঋণাত্মক দিক থেকে আগাতেন তবে তো ধনাত্মক অসীম পেতেন না। নিচের চার্টটা খেয়াল করলেই আসলে ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারবেন
chartneg এর মানে কি? এর মানে হচ্ছে আসলে আমরা যদি সংখ্যা রেখায় ঋণাত্মক বা নেগেটিভ দিক থেকে ০ এর কাছে এগোই তবে আমরা দেখব ১/০ এর মান ঋণাত্মক অসীমের দিকে চলে যাচ্ছে। তো কেউ যদি বলে ১/০ এর আসন্ন মান ঋণাত্মক অসীম তবে তো সেটাও ভুল হবে না। আমরা জানি যোগ বিয়োগ গুন ভাগের মত অপারেশনের ক্ষেত্রে একটির বেশি মান এলে তার ইউনিক মান থাকে না, সে ক্ষেত্রে তা অসঙ্গায়িত হয়ে যায়। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে ১/০ এর মান অসঙ্গায়িত। কারন এর দুইটি মান আসে। ধনাত্মক দিক থেকে এগুলে ধনাত্মক অসীম আবার ঋণাত্মক দিক থেকে এগুলে ঋণাত্মক অসীম। তার মানে এর কোন ইউনিক মান নেই। তাই এটা অসঙ্গায়িত। যদিও এটা অসঙ্গায়িত কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ১/০ এর মান কি হতে পারে সেটা আমরা বিবেচনা করে বের করতে পারি। ওই যে গনিতে অনেক সময় দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান করলে পজিটিভ নেগেটিভ দুইটা মান চলে আসে না। কিন্তু মনে করলাম ওই দ্বিঘাত সমীকরণ দিয়ে আমাকে কোন একটা পরিবারের সদস্য সংখ্যা বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমি শুধু ধনাত্মক মানটাই নেব, কারন লোক সংখ্যা তো আর ঋণাত্মক হতে পারে না। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি ঠিক করতে পারব যে কোন মানটা নেয়া সবচাইতে যুক্তিযুক্ত।
যাইহোক একটা জিনিস দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। অনেকে বলতে পারেন একের অধিক মান চলে আসলে তার আর কোন ইউনিক ভেলু থাকে না, অসঙ্গায়িত হয়ে যায়। তাহলে তো বেশিরভাগ ফাংশনই অসঙ্গায়িত। কারন একটি ফাংশনের সমাধান করলে কত মানই তো বের হয়। প্লিজ, বিষয়টাকে গোলাবেন না। আমি কিন্তু এখানে অপারেশন বলতে আমরা যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগের কথা বলেছি। আমি ফাংশনের কথা বলি নাই। এখানে আরও অনেক সূক্ষ্ম বিষয় আছে। সেগুলো বলে জল ঘোলা করব না।
তার মানে যোগ, বিয়োগ, গুন ভাগের ক্ষেত্রে যেখানে ইউনিক ভেলু থাকবে না, একের বেশি মান দেখা যাবে সেটাই অসঙ্গায়িত।
এখন আলোচনা করা যাক অনির্ণেয় কি?
অনির্ণেয় এক ধরনের অসঙ্গায়িত। অসঙ্গায়িতের মাঝে এক ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জাতকে অনির্ণেয় বলা হয়। কোন জাতকে?
যোগ, বিয়োগ, গুন ভাগের মত অপারেশনের ক্ষেত্রে যেই সমস্ত অসঙ্গায়িতের অসংখ্য মান আছে, এত মান আছে যে হিসেব করে বের করা সম্ভব না সেগুলাই আসলে অনির্ণেয়। এই যেমন মনে করুন ০/০ এর মান আসলে কত? এটা একটা অনির্ণেয়। এর অসংখ্য মান আছে।
কেউ কেউ বলতে পারে ০/০ কে ভাগ করা সম্ভব না। কারন আমরা জানি নিচে ০ থাকলে ভাগ দেয়া যাবে না।
আবার কেউ বলবেন উপরে ০, নিচেও ০। কাটাকাটি করলে হয় ১ !
আবার কেউ হয়তো বলবেন, মনে করি
0/0 = n
বা, 0= n.0
এখন আমরা জানি ০ এর সাথে যাই গুন করেন মান ওই ০ ই হবে। তাহলে n এর জায়গায় যতো বাস্তব সংখ্যাই বসান, যাই বসান ০ ই হবে। তার মানে আমরা বলতে পারি,
0/0 = n হলে, n এর মান সমস্ত সংখ্যাই হতে পারে। এর যে আসলে কত মান হতে পারে সেটা গুনে শেষ করা যাবে না। তাই এটা আসলে অনির্ণেয়। আর মনে রাখতে হবে সমস্ত অনির্ণেয়ই আসলে অসঙ্গায়িত। কিন্তু সমস্ত অসঙ্গায়িত অনির্ণেয় না।
এবার সীমা নিয়ে খুব সামান্য আলোচনা করব আজকের জন্য। আচ্ছা আপনারা খেয়াল করেছেন কি না জানি না, আমি কিন্তু বলি নি ১/০ এর মান ধনাত্মক অসীম বা ঋণাত্মক অসীম। আমি এখানে আসন্ন ( হতে পারে) কথাটা ব্যবহার করেছি। আমি দেখিয়েছি, ১ কে যেই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করব তার মান যদি ০ এর কাছাকাছি যায় সংখ্যারেখার ধনাত্মক দিক থেকে তবে তার মান ধনাত্মক অসীমের দিকে যাবে। আর ঋণাত্মক দিক থেকে এগুলে ঋণাত্মক অসীমের দিকে যাবে। অর্থাৎ এই কথাটাকে গাণিতিক ভাবে প্রকাশ করলে –
\lim_{x\to +0} 1/n = +\infty
এবং
\lim_{x\to -0} 1/n = +\infty
এর মানে কি? এই সমীকরণ দুইটা কি বলছে?
এরা বলছে যে n এর মান ০ এর দিকে যাবে, সারাজীবন ধরে ছোট হতে থাকবে, কিন্তু কখনও শূন্য হতে পারবে না। এখন n যদি o এর খুব কাছাকাছি একটা সংখ্যা হয় তবে 1/n এর মান, n কোন দিক থেকে ০ এর কাছে যাচ্ছে তার উপরে ভিত্তি করে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অসীমে পরিণত হবে।
অর্থাৎ আমি এই লেখার কোথাও ভুলেও বলি নি যে, ১/০ এর মান ধনাত্মক অসীম বা ঋণাত্মক অসীম। বরং বলেছি ১ এর নিচের সংখ্যাটি ০ এর কাছাকাছি গেলে ১/০ এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অসীম হবে। সেই হিসেবে ১/০ এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অসীম হতে পারে। ১/০ এর প্রকৃত মান আমরা কখনই বের করতে পারি না, কিন্তু আমরা বলতে পারি কোন দিক থেকে ০ এর দিকে আগাচ্ছি তার উপরে ভিত্তি করে ১/০ এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অসীম হতে পারে। হতে পারে আর হওয়া কিন্তু এক না।
তো এখানে আমাদের n এর মান ০ এর কাছাকাছি যাচ্ছে। কিন্তু কখনও ০ হচ্ছে না। আর n এর মান কখনও ০ হতেও পারবে না, হলে বড় ধরনের সমস্যা হবে। কিন্তু n এর মান ০ এর অনেক অনেক, খুব খুব কাছে যেতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু ০ হতে পারবে না। এর মানে আসলে কি? এর মানে হচ্ছে n এর সীমা ০। n চাইলে ০ এর অসীম পরিমাণ নিকটে যেতে পারে, কিন্তু কখনও ০ হতে পারবে না। তার সীমারেখার ০ এর আগ পর্যন্ত বন্ধি। এই হচ্ছে গণিতের সীমার ধারনা। কিছু বিষয়ে আপনাদের বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারি। কিন্তু এর পরের পর্বে আপনারা পুরোপুরিভাবে সীমার ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।
শেষ কথা ১/০ এর প্রকৃত কোন মান নেই। তবে এর দুইটা মান হতে পারে। ধনাত্মক অসীম বা ঋণাত্মক অসীম। এর দুইটা মান হতে পারে তো তাই এটা অসঙ্গায়িত। এরকম করে যারই একের অধিক মান হতে পারে সেটাই অসঙ্গায়িত। আর যাদের ইউনিক ভেলু বা নির্দিষ্ট মান নেই তাদের সবার ক্ষেত্রেই মান হবে না বলে হতে পারে বলা যেতে পারে। হতে পারে বলাটাই তো যুক্তিযুক্ত, তাই না?
তৃতীয় পর্ব ক্যালকুলাস, (বিন্দু এবং অসীমের গল্প) https://blog.mukto-mona.com/2015/08/28/47458/#i-3
ক্যালকুলাসের সীমা বিষয়টাকে আরও গভীরভাবে ফিল করবার জন্য প্রয়োজন বিন্দুর ধারনা। তাই এই পর্ব। পুরাটাই বিন্দু নিয়ে, এরপরের পর্বে আমরা সীমা নিয়ে আলোচনা একটা মোটামুটি উপসংহার টানব।
অসীম এমন একটা ধারণা যা আমাদের অনুভূতিকে শিহরিত করে। সসীমতা ধারণ করে অসীম কে বুঝা আসলে বেশ কঠিন ব্যাপার। তবুও মানুষ কৌতূহলী, সে এই কঠিন বিষয়টাকেও ফেলে দিতে চায় না। তাকে বুঝতেই হবে। বুঝতে গিয়ে সে দেখেছে তার মাঝেও রয়েছে অসীম। সীমার মাঝেই যে অসীম !
আর বিন্দু হচ্ছে ক্ষুদ্রতার শেষ সীমা।
অসীম আর বিন্দুর মত ক্ষুদ্রতাকে বুঝতে গিয়ে আমাদের যে কত নাকানি চুবানি খেতে হয়েছে তা নিচের প্যারাডক্সটা থেকেই বুঝা যায় –
ধরুন, আমি একটা ইট ছুড়লাম। ইটটা ১০ মিটার দূরে গিয়ে পরল। এখন আমি ইটটা ছোঁড়ার সময় থেকে ১০ মিটার দূরে গিয়ে পরার আগ পর্যন্ত ইটটার অসংখ্য ছবি তুলেছি। আচ্ছা বলুন তো ছবিতে ইটের গতি বেগ কত? আসলে ছবিতে ইটটার গতি শুন্য। সেইখানে ইটের কোনও গতি থাকতে পারে না। ছবিটা একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে ইটটির অবস্থা প্রকাশ করছে। আমরা জানি মুহূর্তের সময় ব্যবধান শুন্য। সুতরাং সেইখানে ইটের গতিবেগ ও শুন্য।
এখন আমরা যদি ইটের এক স্থান থেকে অন্য একটা স্থানে যাওয়াকে এরকম অসীম মুহূর্তের সমষ্টি মনে করি, তবে আমাদের ভাবতেই হবে জগতে গতি বলে কিছুই নেই। কারন সবগুলো ছবিতে (মুহূর্তে) ইটের শুন্য গতি। তবে একটা গতিহীন বস্তু কিভাবে একস্থান থেকে অন্য একটা স্থানে যেতে পারে? তবে কি পুরো জগতটাই একটা ভ্রান্তি। আমরা কি সেই ভ্রান্তির মাঝেই বসবাস করছি। সময়, গতি এসবের কি কোন অস্তিত্বই নেই?সবই কি আমাদের দেখার, বুঝার ভুল?
চলুন, সমস্যাটাকে সমাধান করা যাক। আচ্ছা আমি যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করি সংখ্যারেখায় ১ এর ঠিক পরের বিন্দুর অবস্থান টা কোথায়? আপনি কি বলবেন?
২?
না সংখ্যারেখায় একের আরও কাছের বিন্দু রয়েছে, আমি যদি এবার বলি, ১.০৫
এবার আপনি বলতে পারেন, ১.০০০১
আমি এবার ১ এর আরও কাছের সংখ্যার কথা বলতে পারি, ১.০০০০০০০০০০০১
এভাবে আমরা অসীম কাল পর্যন্ত যেতেই থাকব কিন্তু ১ এর ঠিক পরের বিন্দুর অবস্থাণটি আমরা কখনই বলতে পারব না।( এখানে আমরা একের ঠিক পরের সংখ্যাটিকে, সংখ্যা না বলে বিন্দু বলেছি, এতে কোনও অসুবিধা নাই )।
বিন্দু জিনিসটি কি?
আমি খাতায় কলম দিয়ে একটি ফোঁটা আঁকলাম, এটা কি একটা বিন্দু? আমি হলপ করে বলতে পারি আপনি এটাকে বিন্দু বলবেন।
কিন্তু আমরা যেই পিথাগরিয়ান বিন্দুর কথা কল্পনা করি, তার কিন্তু মাত্রা শুন্য, আয়তনও নেই। অথচ আপনি যেই জিনিসটাকে বিন্দু বলেছেন খুব সূক্ষ্ম যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করলে দেখতে পাবেন, এর একটা দৈর্ঘ্য আছে। এটা কিছুটা জায়গাও দখল করেছে। কালির একটা স্তর তার উপরে পরেছে, তাই এর একটা উচ্চতাও রয়েছে। যাকে আমরা আলোচনার সুবিধার জন্য বিন্দু বলে থাকি তা আসলে আমাদের সেই পিথাগরিয়ান বিন্দু নয়, যা শুন্য মাত্রার, শুন্য আয়তনের। পিথাগরিয়ান এই বিন্দুকে আপনি কোনও কিছুর মাঝেই নির্দিষ্ট করতে পারবেন না। কারন তা অনেক ছোট, শুননের অসীম পরিমাণ নিকটে, এই বিন্দু অসীম পরিমাণ ক্ষুদ্র। আপনি যেমন কোন কিছুর মাঝে পিথাগরিয়ান বিন্দুর অবস্থান বলতে পারছেন না, ঠিক তেমন ভাবেই আপনি সংখ্যারেখায় একের ঠিক পরের বিন্দুর অবস্থানটাও বলতে পারছেন না।সংখ্যা রেখায় ১ এর ঠিক পরের সংখ্যা বা বিন্দুর অবস্থান বলা আর যেকোনো জায়গায় একটি বিন্দুর অবস্থান নির্দিষ্ট করা আসলে একই ব্যাপার। আমাদের এই সীমাবদ্ধতা কেন, তা একটু পরেই বলব।
যাই হোক, গণিতে ১ এর ঠিক পরের সংখ্যাটিকে এইভাবে প্রকাশ করা হয় –
মনে করি, ১ এর ঠিক পরের বিন্দুটি হচ্ছে X।
সুতরাং
$\lim_{x to 1} x $
এখানে বোঝানো হয়ছে ‘x’ tends to ‘1’ অর্থাৎ x অসীম কাল ধরে 1 এর কাছে যাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেখানে x এর সীমা হচ্ছে ১।
সংখ্যারেখায় ১ এর ঠিক পরের বিন্দুটি বা সংখ্যাটি ধরতে গিয়ে আপনি x আর ১ এর ব্যবধান শুননের কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন,যেখানে ‘x’ এর সীমা হচ্ছে ১। তবুও আপনি ১ এর পরের বিন্দুটি বলতে পারছেন না। কারন x আর ১ এর ব্যবধান শুধুমাত্রই একটি বিন্দু, যা অসিমতর ক্ষুদ্র এবং আমরা তা নির্দিষ্ট করতে পারি না। এ থেকে বুঝা যায় আমরা চাইলেই যত ইচ্ছে ছোট কোনও কিছু ভাবতে পারি না। আর একটি পিথাগরিয়ান বিন্দুর মত ক্ষুদ্র কোনও কিছুকে তো নয়ই। তো যা আমরা কল্পনা করতে পারছি না, কোনও কিছুর মাঝে তার অবস্থানটুকু কি করে বলব?
এতক্ষণ আমরা আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানলাম। চলুন এবার এই জ্ঞানটাকে কাজে লাগানো যাক। আমরা বলেছি ইচ্ছে মত ছোট জিনিস জ্ঞাপন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর অন্যদিকে বাস্তবে দেখা যায় একটা নির্দিষ্ট মাত্রার চাইতে ছোট কোন কিছু হতেই পারে না। এই মাত্রাটা হচ্ছে প্ল্যাঙ্ক স্কেল।আমাদের এই চিরাচরিত জগতে প্ল্যাঙ্ক স্কেল এর চাইতে ক্ষুদ্র সময় যেমন নাই, তেমনিভাবে এত ছোট দৈর্ঘ্যও নাই। এই প্ল্যাঙ্ক স্কেল আবার পিথাগরিয়ান বিন্দু থেকে ছোট নয় কিন্তু। তার তুলনায় অনেক বড়।
তো আপনি যখন বলেন ইটটির গতিবেগ শুন্য,কারন প্রতিটি ছবিতেই সে স্থির। সেখানে কিন্তু একটি ভুল থেকেই যায়। ভুলটি হচ্ছে সত্যই ছবিতে ইটের বেগ শুন্য। কিন্তু আপনি যখন ছবি তুলছেন প্রতি দুইটা ছবি অন্তর কিছুটা সময় ব্যয় হচ্ছে। যার সম্ভাব্য সবনিন্ম মান হচ্ছে প্ল্যাঙ্ক সময়। আপনি দুইটি পরপর তোলা ছবি লক্ষ করলে দেখতে পাবেন ইটটি প্রথম তোলা ছবিতে যেই অবস্থানে, দ্বিতীয় তোলা ছবিতে তার অবস্থানের সর্বনিন্ম হবে ব্যবধান প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্য। ইটটি পরের ছবিতে কিন্তু বিন্দু ব্যবধান অতিক্রম করে নি। যা করেছে তার সীমা প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্য, যা পিথাগরিয়ান বিন্দুর চাইতে অনেক অনেক বড়। এবার বোঝা গেল গলদটা যে গোড়াতেই।
(জেনোর প্যারাডক্স এর উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি আমার তৈরি করা)
২ ক্যালকুলাস, ২য় পর্ব (সীমার একটা ফাজলামি আছে !)
৩ ক্যালকুলাস, তৃতীয় পর্ব (বিন্দু এবং অসীমের গল্প)
ক্যালকুলাস, প্রথম পর্ব (অস্তিত্বের শেকড় সন্ধানী) https://blog.mukto-mona.com/2015/08/28/47458/#i
ক্যালকুলাস বিশ্লেষণী জ্যামিতির একটি শাখা। এবং সবচাইতে সমৃদ্ধশীল অধ্যায়এর নাম । গণিত আর বিজ্ঞানের কত সমস্যা যে এটা দিয়ে সমাধান করা গেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। পদার্থবিদ্যার প্রায় সব থিওরিয়ের ভিত্তি বলতে গেলে এই ক্যালকুলাসই। এক কথায় বলা যায়, ক্যালকুলাসের অবদানের কথা বলে শেষ করা সম্ভব না।
কিন্তু এখনও ক্যালকুলাস কি সেটাই তো জানা গেল না। সমস্যা নেই। শুরু করছি। অন্তত এতটুকু তো বোঝা গেল যে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং শিখলে খুব একটা ভুল হবে না,উপকার ছাড়া।
ক্যালকুলাস জানার জন্য একটা প্রয়োজনীয় বিষয় জেনে নিতে হবে যার নাম – লিমিট। লিমিট আসলে কি?
লিমিট আবার কি? সীমা।
মনে করুন, কিছু দিন আগে আপনাকে একজন বলল, খাওয়ার একটা সীমা আছে। এর মানে আসলে কি ?
মানে হচ্ছে, আপনি যেই পরিমানে খানা পিনা শেষ করছেন সেটা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বাড়তে বাড়তে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের যদি বেশি হয়ে যায় তবে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারে ! হয়ত আপনি ফুটে বাস্ট হয়ে যেতে পার, অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কারনে তাই আগে থেকেই সাবধান বানী। – খাওয়ার একটা সীমা আছে।
গনিতেও গণিতবিদরা এরকম কিছু জায়গা আছে, এরকম কিছু কাজ আছে যেগুলো করার আগে আপনাকে সাবধান করে দেবে । খবরদার ! সীমা অতিক্রম কর না । ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাবে।
একটা উদাহরণ দেই – মনে করুন একটা ফাংশন আছে –
F(x) = \{(x+3). (x-3)\} / (x-3)
উপরে একটা ফাংশন দেখছি? এখানে f(x) এ x এর জায়গায় বিভিন্ন মান কিংবা সংখ্যা বসিয়ে আমরা নতুন নতুন সংখ্যা পাব। মনে রাখুন এটা কিন্তু ফাংশন। এটা কোন সমীকরণ নয় যে এখানে x এর একটা বা দুইটা মান থাকবে। এখানে x এর জায়গায় অসীম সংখ্যক মান বসতে পারে। আচ্ছা আমরা এই ফাংশনের একটা ছক তৈরি করি না কেন?
x F(x) = \{(x+3). (x-3)\} / (x-3)
0 3
1 4
2 5
3 !?!
1 2
5 8
-4 -1
এখানে আমি x এর মাঝে এলোপাতারি কতগুলো মান বসিয়েছি । যার কারনে F(x) এর বিভিন্ন মান পেয়েছি। তাই না? কিন্তু x এর মাঝে একটা মান আমি বেশ সচেতনভাবেই বসিয়েছি। সেটা হচ্ছে 3 । কারণ আমি জানতাম x এর মাঝে 3 বসালে কেলেঙ্কারি কিছু হবে। আর তাইই হয়েছে। এই যে কেলেঙ্কারির চিহ্ন !? !
কারণ ফাংশনে 3 বসাবার আগেই অনেকে ফাংশনটাকে সুন্দর করবার জন্যে উপরে নিচে (x-3) কাটাকাটি করে দিতে পারে। এরপরে বাকি থাকবে শুধু মাত্র (x=3)। তো এখন x এরজায়গায় ৩ বসিয়ে দিলেই চলে। তবে ফাংশনের মান হবে ৬ । হয়েই তো গেল।
কিন্তু না আপনি সেটা করতে পারেন না। আপনি যখন ধরে নিচ্ছেন x এর মান 3 বসাবেন তখন কিন্তু ভুলেও (x-3) কাটাকাটি করতে পারবেন না। এটা কাটাকাটি করার অর্থ আপনি শূন্যকে শুন্য দিয়ে ভাগ করছেন। যেটা আসলে গণিতের ভাষায় একটা কেলেঙ্কারি।
০ কে ০ দিয়ে ভাগ করলে বা কাটাকাটি করলে কি ধরনের ভয়ানক জিনিস হতে পারেন একটু দেখুন –
X = Y
XY = Y^2
দুই পাশে X^2 বিয়োগ করে পাই –
XY - X^2 = Y^2 - X^2
X(Y - X) = (Y+X)(Y-X)
এখন দুই পাশ থেকে ( Y - X ) কাটাকাটি করে ফেললে বাকি থাকে,
X = X + Y
যেহেতু X = Y কাজেই Y এর জায়গায় X লিখে পাই-
X = X + X
অর্থাৎ, X = 2X
অর্থাৎ, 1 = 2
কি ভয়ানক কথা !
আসলে এখানে, X = Y
তাই
X-Y=X-X=O
সুতরাং দুই পাশ থেকে X-Y কাটাকাটি করলে সেটা অংকের ভাষায় অনির্ণেয় হবে। আর এই সমস্ত অনির্ণেয় সংখ্যাকে আমরা কখনও নির্ণয় করতে পারি না। ( ক্যালকুলাস জানার আগে পর্যন্ত এটাই বিশ্বাস করে নিতে হবে )
তার মানে আমরা কিন্তু F(x) এর ক্ষেত্রে একটা জিনিস বলে দিতে পারি। তুমি x এর ক্ষেত্রে যেকোনো মান নিতে পার, সব, মান গ্রহণ করতে পার। কিন্তু এই, ভুল করেও তিনের ধারে কাছে যাবে না। 3 হচ্ছে তোমার সীমা। অর্থাৎ তুমি সব সংখ্যা নিতে পার, সবখানে যেতে পার, কিন্তু ভুলেও ৩ এর ধারে কাছে যাবে না !
অর্থাৎ আমাদের শুধু খাওয়া দাওয়া, দুষ্টামি কিংবা লুচ্চামির ক্ষেত্রেই নয় গণিতের ক্ষেত্রেও সীমা নামের একটা ব্যাপার আছে। আজকে এখানেই থাক এক দিনে এর চাইতে বেশি আর লিখতে চাচ্ছি না। তবে এরপরের পর্বে আমরা সীমার একটা সার্বজনীন সংজ্ঞা দেব। ফাংশনের সীমা কি করে বার করতে হয় সেটাও শিখব। এবং দেখব সব কিছুর আসলে সীমা নাও থাকতে পারে !
২য় পর্ব ক্যালকুলাস, (সীমার একটা ফাজলামি আছে !) https://blog.mukto-mona.com/2015/08/28/47458/#i-2
ক্যালকুলাস নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় পর্বে ফিরে এলাম। এর আগের অধ্যায়ে আমরা কি দেখেছি? ০/০ এটা আসলে অনির্ণেয়। এর মান বের করা সম্ভব না। আচ্ছা আমরা গনিতে দুইটি শব্দ খুব বেশি করে শুনি, অসঙ্গায়িত আর অনির্ণেয় তাই না? কিন্তু এই শব্দ দুইটির আসল অর্থই কি আর এদের মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে? শাব্দিক দিক থেকে তো এদের অর্থ প্রায় কাছাকাছি মনে হয়। কিন্তু না, আসলে এদের মাঝে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।
অসঙ্গায়িতঃ গণিতের যেই ক্যাল্কুলেশন কে আসলে কোন সংজ্ঞাতেই ফেলা যায় না সেটাই অসঙ্গায়িত।
প্রথমে বলে নেই এখানে অপারেশন বলতে আমরা যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগের কথা বলব।
আমরা যদি একটু লক্ষ করি তবে দেখতে পাব যে গণিতের প্রত্যেকটি অপারেশনের একটি ইউনিক মানে আছে। মনে করা যাক ৫+৬ এর মান কত, ১১। তাই না? কিন্তু আপনি কি কখনও ৫+৬ এর ১১ বাদে অন্য কোন মান পাবেন? পাবেন না। এই অপারেশনটির একটিই মান। প্রতিটি অপারেশনের ক্ষেত্রে অঙ্কে এরকম ইউনিক মান পাওয়া যায়। আবার ২/৪ সমান কত .৫ তাই না? কিন্তু আপনার পক্ষে কি ২/৪ এর .৫ বাদে অন্য কোন মান বা ফলাফল পাওয়া সম্ভব। আসলে আদৌ কখনও সম্ভব না। প্রতিটি অপারেশনের শুধু একটি ও কেবলমাত্র একটিই মান পাওয়া যাবে। এই কারনেই এই মানকে আমরা এখানে ইউনিক ভ্যেলু নাম দিচ্ছি।
এখন মনে করুন কখনও যদি দেখেন একটা অপারেশনের কোন ইউনিক মান নেই, বরং দুই তিনটা মান চলে আসছে তখনই সেটা হবে অসঙ্গায়িত। অর্থাৎ যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগের মত কোন অপারেশনে যদি একের অধিক মান চলে আসে তখনি তাকে অসঙ্গায়িত বলা হয়। যেমন ৫+৬ = ১১ আবার আরেকবার আসছে ৫+৬ = ১৩।
তার মানে যাহাই এগার তাহাই তের? আসলে উপরের এই ক্ষেত্রটা কখনও সম্ভব না। কখনও এরকম হতে পারে না, কারন ৫+৬ এর সবসময়ই একটা ইউনিক মান আসবে যদি ভুল না করে থাকেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্র আছে এই সমস্ত অপারেশনের ক্ষেত্রে যেখানে ইউনিক মান আসে না, তাই অসাঙ্গায়িত হয়। কারন একাধিক মান সেখানে তৈরি হয়।
যেমন, একটা উদাহরণ দেই ১/০ সমান কত?
কেউ কেউ হয়ত অপারেশনটা দেখেই দুম করে বলে দেবেন, পাগল না কি? এটা তো অসঙ্গায়িত ! এর আবার মান আসে কি করে? কিন্তু কেন এটা অসঙ্গায়িত সেটা কি আমরা জানি। তাই দেখব, যে কেন অসঙ্গায়িত?
আচ্ছা আমরা তো সরাসরি ০ দিয়ে কিছুকে ভাগ করতে পারি না, তাই একটা বিকল্প পদ্ধতি বের করবার চেষ্টা করব। একটু ভিন্ন কায়দায়, কিছু করা যায় না কি। আচ্ছা 1/n এ একের নিচে n এর জায়গায় দুই বসালে কত হয়? .৫। এরপরে ৩ বসালে হয় ০.৩। এখন একটা উলটা কাজ করি। বরং ১ কে তার চাইতে ছোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করি। ১ কে .৫ দিয়ে ভাগ করলে হয় ২। নিচের চার্টটা দেখি
chart
আমরা কি চার্টটার মাঝে একটা জিনিস লক্ষ করেছি? যতই n এর মান ০ এর কাছাকাছি যাচ্ছে, ছোট হচ্ছে, 1/n এর মান ততই অসীমের দিকে চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি ১ এর মান ০ এর একেবারে কাছাকাছি এসে পরলে 1/n এর মান ধনাত্মক অসীমের দিকে চলে যাবে। সারাংশ হিসেবে বলতে পারি ১/০ এর আসন্ন মান ধনাত্মক অসীম।
তো এখন কেউ যদি বলে যে 1/n এর বেলায় আপনি তো ০ এর কাছে ধনাত্মক দিক থেকে এগিয়েছেন। .00000001, .000000001 এরকম করে এগিয়েছেন, তাই পেয়েছেন ধনাত্মক অসীম। কিন্তু আপনি যদি ঋণাত্মক দিক থেকে আগাতেন তবে তো ধনাত্মক অসীম পেতেন না। নিচের চার্টটা খেয়াল করলেই আসলে ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারবেন
chartneg এর মানে কি? এর মানে হচ্ছে আসলে আমরা যদি সংখ্যা রেখায় ঋণাত্মক বা নেগেটিভ দিক থেকে ০ এর কাছে এগোই তবে আমরা দেখব ১/০ এর মান ঋণাত্মক অসীমের দিকে চলে যাচ্ছে। তো কেউ যদি বলে ১/০ এর আসন্ন মান ঋণাত্মক অসীম তবে তো সেটাও ভুল হবে না। আমরা জানি যোগ বিয়োগ গুন ভাগের মত অপারেশনের ক্ষেত্রে একটির বেশি মান এলে তার ইউনিক মান থাকে না, সে ক্ষেত্রে তা অসঙ্গায়িত হয়ে যায়। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে ১/০ এর মান অসঙ্গায়িত। কারন এর দুইটি মান আসে। ধনাত্মক দিক থেকে এগুলে ধনাত্মক অসীম আবার ঋণাত্মক দিক থেকে এগুলে ঋণাত্মক অসীম। তার মানে এর কোন ইউনিক মান নেই। তাই এটা অসঙ্গায়িত। যদিও এটা অসঙ্গায়িত কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ১/০ এর মান কি হতে পারে সেটা আমরা বিবেচনা করে বের করতে পারি। ওই যে গনিতে অনেক সময় দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান করলে পজিটিভ নেগেটিভ দুইটা মান চলে আসে না। কিন্তু মনে করলাম ওই দ্বিঘাত সমীকরণ দিয়ে আমাকে কোন একটা পরিবারের সদস্য সংখ্যা বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমি শুধু ধনাত্মক মানটাই নেব, কারন লোক সংখ্যা তো আর ঋণাত্মক হতে পারে না। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় আমি ঠিক করতে পারব যে কোন মানটা নেয়া সবচাইতে যুক্তিযুক্ত।
যাইহোক একটা জিনিস দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। অনেকে বলতে পারেন একের অধিক মান চলে আসলে তার আর কোন ইউনিক ভেলু থাকে না, অসঙ্গায়িত হয়ে যায়। তাহলে তো বেশিরভাগ ফাংশনই অসঙ্গায়িত। কারন একটি ফাংশনের সমাধান করলে কত মানই তো বের হয়। প্লিজ, বিষয়টাকে গোলাবেন না। আমি কিন্তু এখানে অপারেশন বলতে আমরা যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগের কথা বলেছি। আমি ফাংশনের কথা বলি নাই। এখানে আরও অনেক সূক্ষ্ম বিষয় আছে। সেগুলো বলে জল ঘোলা করব না।
তার মানে যোগ, বিয়োগ, গুন ভাগের ক্ষেত্রে যেখানে ইউনিক ভেলু থাকবে না, একের বেশি মান দেখা যাবে সেটাই অসঙ্গায়িত।
এখন আলোচনা করা যাক অনির্ণেয় কি?
অনির্ণেয় এক ধরনের অসঙ্গায়িত। অসঙ্গায়িতের মাঝে এক ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জাতকে অনির্ণেয় বলা হয়। কোন জাতকে?
যোগ, বিয়োগ, গুন ভাগের মত অপারেশনের ক্ষেত্রে যেই সমস্ত অসঙ্গায়িতের অসংখ্য মান আছে, এত মান আছে যে হিসেব করে বের করা সম্ভব না সেগুলাই আসলে অনির্ণেয়। এই যেমন মনে করুন ০/০ এর মান আসলে কত? এটা একটা অনির্ণেয়। এর অসংখ্য মান আছে।
কেউ কেউ বলতে পারে ০/০ কে ভাগ করা সম্ভব না। কারন আমরা জানি নিচে ০ থাকলে ভাগ দেয়া যাবে না।
আবার কেউ বলবেন উপরে ০, নিচেও ০। কাটাকাটি করলে হয় ১ !
আবার কেউ হয়তো বলবেন, মনে করি
0/0 = n
বা, 0= n.0
এখন আমরা জানি ০ এর সাথে যাই গুন করেন মান ওই ০ ই হবে। তাহলে n এর জায়গায় যতো বাস্তব সংখ্যাই বসান, যাই বসান ০ ই হবে। তার মানে আমরা বলতে পারি,
0/0 = n হলে, n এর মান সমস্ত সংখ্যাই হতে পারে। এর যে আসলে কত মান হতে পারে সেটা গুনে শেষ করা যাবে না। তাই এটা আসলে অনির্ণেয়। আর মনে রাখতে হবে সমস্ত অনির্ণেয়ই আসলে অসঙ্গায়িত। কিন্তু সমস্ত অসঙ্গায়িত অনির্ণেয় না।
এবার সীমা নিয়ে খুব সামান্য আলোচনা করব আজকের জন্য। আচ্ছা আপনারা খেয়াল করেছেন কি না জানি না, আমি কিন্তু বলি নি ১/০ এর মান ধনাত্মক অসীম বা ঋণাত্মক অসীম। আমি এখানে আসন্ন ( হতে পারে) কথাটা ব্যবহার করেছি। আমি দেখিয়েছি, ১ কে যেই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করব তার মান যদি ০ এর কাছাকাছি যায় সংখ্যারেখার ধনাত্মক দিক থেকে তবে তার মান ধনাত্মক অসীমের দিকে যাবে। আর ঋণাত্মক দিক থেকে এগুলে ঋণাত্মক অসীমের দিকে যাবে। অর্থাৎ এই কথাটাকে গাণিতিক ভাবে প্রকাশ করলে –
\lim_{x\to +0} 1/n = +\infty
এবং
\lim_{x\to -0} 1/n = +\infty
এর মানে কি? এই সমীকরণ দুইটা কি বলছে?
এরা বলছে যে n এর মান ০ এর দিকে যাবে, সারাজীবন ধরে ছোট হতে থাকবে, কিন্তু কখনও শূন্য হতে পারবে না। এখন n যদি o এর খুব কাছাকাছি একটা সংখ্যা হয় তবে 1/n এর মান, n কোন দিক থেকে ০ এর কাছে যাচ্ছে তার উপরে ভিত্তি করে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অসীমে পরিণত হবে।
অর্থাৎ আমি এই লেখার কোথাও ভুলেও বলি নি যে, ১/০ এর মান ধনাত্মক অসীম বা ঋণাত্মক অসীম। বরং বলেছি ১ এর নিচের সংখ্যাটি ০ এর কাছাকাছি গেলে ১/০ এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অসীম হবে। সেই হিসেবে ১/০ এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অসীম হতে পারে। ১/০ এর প্রকৃত মান আমরা কখনই বের করতে পারি না, কিন্তু আমরা বলতে পারি কোন দিক থেকে ০ এর দিকে আগাচ্ছি তার উপরে ভিত্তি করে ১/০ এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক অসীম হতে পারে। হতে পারে আর হওয়া কিন্তু এক না।
তো এখানে আমাদের n এর মান ০ এর কাছাকাছি যাচ্ছে। কিন্তু কখনও ০ হচ্ছে না। আর n এর মান কখনও ০ হতেও পারবে না, হলে বড় ধরনের সমস্যা হবে। কিন্তু n এর মান ০ এর অনেক অনেক, খুব খুব কাছে যেতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু ০ হতে পারবে না। এর মানে আসলে কি? এর মানে হচ্ছে n এর সীমা ০। n চাইলে ০ এর অসীম পরিমাণ নিকটে যেতে পারে, কিন্তু কখনও ০ হতে পারবে না। তার সীমারেখার ০ এর আগ পর্যন্ত বন্ধি। এই হচ্ছে গণিতের সীমার ধারনা। কিছু বিষয়ে আপনাদের বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারি। কিন্তু এর পরের পর্বে আপনারা পুরোপুরিভাবে সীমার ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।
শেষ কথা ১/০ এর প্রকৃত কোন মান নেই। তবে এর দুইটা মান হতে পারে। ধনাত্মক অসীম বা ঋণাত্মক অসীম। এর দুইটা মান হতে পারে তো তাই এটা অসঙ্গায়িত। এরকম করে যারই একের অধিক মান হতে পারে সেটাই অসঙ্গায়িত। আর যাদের ইউনিক ভেলু বা নির্দিষ্ট মান নেই তাদের সবার ক্ষেত্রেই মান হবে না বলে হতে পারে বলা যেতে পারে। হতে পারে বলাটাই তো যুক্তিযুক্ত, তাই না?
তৃতীয় পর্ব ক্যালকুলাস, (বিন্দু এবং অসীমের গল্প) https://blog.mukto-mona.com/2015/08/28/47458/#i-3
ক্যালকুলাসের সীমা বিষয়টাকে আরও গভীরভাবে ফিল করবার জন্য প্রয়োজন বিন্দুর ধারনা। তাই এই পর্ব। পুরাটাই বিন্দু নিয়ে, এরপরের পর্বে আমরা সীমা নিয়ে আলোচনা একটা মোটামুটি উপসংহার টানব।
অসীম এমন একটা ধারণা যা আমাদের অনুভূতিকে শিহরিত করে। সসীমতা ধারণ করে অসীম কে বুঝা আসলে বেশ কঠিন ব্যাপার। তবুও মানুষ কৌতূহলী, সে এই কঠিন বিষয়টাকেও ফেলে দিতে চায় না। তাকে বুঝতেই হবে। বুঝতে গিয়ে সে দেখেছে তার মাঝেও রয়েছে অসীম। সীমার মাঝেই যে অসীম !
আর বিন্দু হচ্ছে ক্ষুদ্রতার শেষ সীমা।
অসীম আর বিন্দুর মত ক্ষুদ্রতাকে বুঝতে গিয়ে আমাদের যে কত নাকানি চুবানি খেতে হয়েছে তা নিচের প্যারাডক্সটা থেকেই বুঝা যায় –
ধরুন, আমি একটা ইট ছুড়লাম। ইটটা ১০ মিটার দূরে গিয়ে পরল। এখন আমি ইটটা ছোঁড়ার সময় থেকে ১০ মিটার দূরে গিয়ে পরার আগ পর্যন্ত ইটটার অসংখ্য ছবি তুলেছি। আচ্ছা বলুন তো ছবিতে ইটের গতি বেগ কত? আসলে ছবিতে ইটটার গতি শুন্য। সেইখানে ইটের কোনও গতি থাকতে পারে না। ছবিটা একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে ইটটির অবস্থা প্রকাশ করছে। আমরা জানি মুহূর্তের সময় ব্যবধান শুন্য। সুতরাং সেইখানে ইটের গতিবেগ ও শুন্য।
এখন আমরা যদি ইটের এক স্থান থেকে অন্য একটা স্থানে যাওয়াকে এরকম অসীম মুহূর্তের সমষ্টি মনে করি, তবে আমাদের ভাবতেই হবে জগতে গতি বলে কিছুই নেই। কারন সবগুলো ছবিতে (মুহূর্তে) ইটের শুন্য গতি। তবে একটা গতিহীন বস্তু কিভাবে একস্থান থেকে অন্য একটা স্থানে যেতে পারে? তবে কি পুরো জগতটাই একটা ভ্রান্তি। আমরা কি সেই ভ্রান্তির মাঝেই বসবাস করছি। সময়, গতি এসবের কি কোন অস্তিত্বই নেই?সবই কি আমাদের দেখার, বুঝার ভুল?
চলুন, সমস্যাটাকে সমাধান করা যাক। আচ্ছা আমি যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করি সংখ্যারেখায় ১ এর ঠিক পরের বিন্দুর অবস্থান টা কোথায়? আপনি কি বলবেন?
২?
না সংখ্যারেখায় একের আরও কাছের বিন্দু রয়েছে, আমি যদি এবার বলি, ১.০৫
এবার আপনি বলতে পারেন, ১.০০০১
আমি এবার ১ এর আরও কাছের সংখ্যার কথা বলতে পারি, ১.০০০০০০০০০০০১
এভাবে আমরা অসীম কাল পর্যন্ত যেতেই থাকব কিন্তু ১ এর ঠিক পরের বিন্দুর অবস্থাণটি আমরা কখনই বলতে পারব না।( এখানে আমরা একের ঠিক পরের সংখ্যাটিকে, সংখ্যা না বলে বিন্দু বলেছি, এতে কোনও অসুবিধা নাই )।
বিন্দু জিনিসটি কি?
আমি খাতায় কলম দিয়ে একটি ফোঁটা আঁকলাম, এটা কি একটা বিন্দু? আমি হলপ করে বলতে পারি আপনি এটাকে বিন্দু বলবেন।
কিন্তু আমরা যেই পিথাগরিয়ান বিন্দুর কথা কল্পনা করি, তার কিন্তু মাত্রা শুন্য, আয়তনও নেই। অথচ আপনি যেই জিনিসটাকে বিন্দু বলেছেন খুব সূক্ষ্ম যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করলে দেখতে পাবেন, এর একটা দৈর্ঘ্য আছে। এটা কিছুটা জায়গাও দখল করেছে। কালির একটা স্তর তার উপরে পরেছে, তাই এর একটা উচ্চতাও রয়েছে। যাকে আমরা আলোচনার সুবিধার জন্য বিন্দু বলে থাকি তা আসলে আমাদের সেই পিথাগরিয়ান বিন্দু নয়, যা শুন্য মাত্রার, শুন্য আয়তনের। পিথাগরিয়ান এই বিন্দুকে আপনি কোনও কিছুর মাঝেই নির্দিষ্ট করতে পারবেন না। কারন তা অনেক ছোট, শুননের অসীম পরিমাণ নিকটে, এই বিন্দু অসীম পরিমাণ ক্ষুদ্র। আপনি যেমন কোন কিছুর মাঝে পিথাগরিয়ান বিন্দুর অবস্থান বলতে পারছেন না, ঠিক তেমন ভাবেই আপনি সংখ্যারেখায় একের ঠিক পরের বিন্দুর অবস্থানটাও বলতে পারছেন না।সংখ্যা রেখায় ১ এর ঠিক পরের সংখ্যা বা বিন্দুর অবস্থান বলা আর যেকোনো জায়গায় একটি বিন্দুর অবস্থান নির্দিষ্ট করা আসলে একই ব্যাপার। আমাদের এই সীমাবদ্ধতা কেন, তা একটু পরেই বলব।
যাই হোক, গণিতে ১ এর ঠিক পরের সংখ্যাটিকে এইভাবে প্রকাশ করা হয় –
মনে করি, ১ এর ঠিক পরের বিন্দুটি হচ্ছে X।
সুতরাং
$\lim_{x to 1} x $
এখানে বোঝানো হয়ছে ‘x’ tends to ‘1’ অর্থাৎ x অসীম কাল ধরে 1 এর কাছে যাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যেখানে x এর সীমা হচ্ছে ১।
সংখ্যারেখায় ১ এর ঠিক পরের বিন্দুটি বা সংখ্যাটি ধরতে গিয়ে আপনি x আর ১ এর ব্যবধান শুননের কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন,যেখানে ‘x’ এর সীমা হচ্ছে ১। তবুও আপনি ১ এর পরের বিন্দুটি বলতে পারছেন না। কারন x আর ১ এর ব্যবধান শুধুমাত্রই একটি বিন্দু, যা অসিমতর ক্ষুদ্র এবং আমরা তা নির্দিষ্ট করতে পারি না। এ থেকে বুঝা যায় আমরা চাইলেই যত ইচ্ছে ছোট কোনও কিছু ভাবতে পারি না। আর একটি পিথাগরিয়ান বিন্দুর মত ক্ষুদ্র কোনও কিছুকে তো নয়ই। তো যা আমরা কল্পনা করতে পারছি না, কোনও কিছুর মাঝে তার অবস্থানটুকু কি করে বলব?
এতক্ষণ আমরা আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানলাম। চলুন এবার এই জ্ঞানটাকে কাজে লাগানো যাক। আমরা বলেছি ইচ্ছে মত ছোট জিনিস জ্ঞাপন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আর অন্যদিকে বাস্তবে দেখা যায় একটা নির্দিষ্ট মাত্রার চাইতে ছোট কোন কিছু হতেই পারে না। এই মাত্রাটা হচ্ছে প্ল্যাঙ্ক স্কেল।আমাদের এই চিরাচরিত জগতে প্ল্যাঙ্ক স্কেল এর চাইতে ক্ষুদ্র সময় যেমন নাই, তেমনিভাবে এত ছোট দৈর্ঘ্যও নাই। এই প্ল্যাঙ্ক স্কেল আবার পিথাগরিয়ান বিন্দু থেকে ছোট নয় কিন্তু। তার তুলনায় অনেক বড়।
তো আপনি যখন বলেন ইটটির গতিবেগ শুন্য,কারন প্রতিটি ছবিতেই সে স্থির। সেখানে কিন্তু একটি ভুল থেকেই যায়। ভুলটি হচ্ছে সত্যই ছবিতে ইটের বেগ শুন্য। কিন্তু আপনি যখন ছবি তুলছেন প্রতি দুইটা ছবি অন্তর কিছুটা সময় ব্যয় হচ্ছে। যার সম্ভাব্য সবনিন্ম মান হচ্ছে প্ল্যাঙ্ক সময়। আপনি দুইটি পরপর তোলা ছবি লক্ষ করলে দেখতে পাবেন ইটটি প্রথম তোলা ছবিতে যেই অবস্থানে, দ্বিতীয় তোলা ছবিতে তার অবস্থানের সর্বনিন্ম হবে ব্যবধান প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্য। ইটটি পরের ছবিতে কিন্তু বিন্দু ব্যবধান অতিক্রম করে নি। যা করেছে তার সীমা প্ল্যাঙ্ক দৈর্ঘ্য, যা পিথাগরিয়ান বিন্দুর চাইতে অনেক অনেক বড়। এবার বোঝা গেল গলদটা যে গোড়াতেই।
(জেনোর প্যারাডক্স এর উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি আমার তৈরি করা)