Friday, September 4, 2015

ধর্ম, ধর্মমতবাদ, বিজ্ঞান, জগৎ, ঈশ্বর, নাস্তিকতা, মানবতা, প্রগতি এবং দর্শন।


প্রথম পর্ব- (ধর্ম, ধর্মমতবাদ, বিজ্ঞান, জগ, ঈশ্বর, নাস্তিকতা, মানবতা, প্রগতি এবং দর্শন)
ধর্মের প্রতিশব্দ হল বৈশিষ্ট্য বা স্বভাবএর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল - Property বা Characteristic বা Nature আর ধর্মমতের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Religionআর ধর্মমত হল- ধর্মের নামে যার যার নিজস্ব মতকে বাদ(ism) হিসাবে চালিয়ে দেওয়াযেহেতু ধর্মমত হল যার যার কিংবা কোন গোষ্ঠির নিজস্ব মতামত, তাই ধর্মমত বহু হতে পারে, কিন্তু ধর্ম মানুষের একটাই- মনুষ্যত্ব বা মানবতা
মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু এবং প্রানীরই নির্দিষ্ট ধর্ম কিংবা বৈশিষ্ঠ্য আছে, কিন্তু ধর্মমত নেইযেমন অক্সিজেনের ধর্ম আছে, কিন্তু ধর্মমত নেইসে অর্থে, ধর্ম এক জিনিস, আর ধর্মমতবাদ কিংবা ধর্মতন্ত্র অন্য জিনিসধর্মমতবাদের ধর্মান্ধরা যেমন প্রতিক্রিয়াশীল, ঠিক তেমনি নাস্তিক্যবাদের নাস্তিকরাও এক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীলনাস্তিক এক বিষয়, আর নাস্তিকতা কিংবা নাস্তিক্যবাদ অন্য বিষয়
'সৃষ্টিকর্তা নেই' এটা বুঝতে হলেও অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হয়'সৃষ্টিকর্তা নেই' এটা একটি জ্ঞান কিংবা যুক্তি মাত্রযিনি জ্ঞানী, তিনি নাস্তিক হলেও, নাস্তিক্যবাদীতা তার বৈশিষ্ঠ্য নাতার বৈশিষ্ঠ্য হলো - তিনি মুক্তমনা, মানবতাবাদী কিংবা প্রগতিবাদীতাই নাস্তিক কিংবা নাস্তিক্যবাদী নাস্তিক, আর মুক্তমনা নাস্তিক কিংবা মানবতাবাদী নাস্তিক কিংবা প্রগতিবাদী নাস্তিক কখনোই এক হতে পারে নাবিবেচনা করলে দেখা যায়, মুক্তমনা আর নাস্তিক; কিংবা মানবতাবাদী আর নাস্তিক কখনোই এক নয়শব্দ গুলোর অর্থেও অনেক পার্থক্য
কেউ যদি বলে সে নাস্তিক কিংবা তার ধর্ম নাস্তিকতা, তাহলে সে প্রচলিত ধর্মমত এবং ঈশ্বর বিশ্বাসে, অমূলক অপ্রয়োজনীয় শব্দ প্রয়োগে অপ্রগতিশীল চিন্তা প্রকাশ কিংবা নিজ স্বার্থের জন্য যা ইচ্ছা তাই করার অধিকার রাখে কিন্তু কেউ যদি বলে সে মুক্তমনা বা মানবতাবাদী বা প্রগতিবাদী, তাহলে সে নিজ স্বার্থে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না
আবার যদি বলেন, নাস্তিকতা একটি ধর্ম, তাহলে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী সকল ধর্মগুলোর প্রতি আঘাত করা আপনার অযৌক্তিক হবে নাঅন্য ধর্মের সাথে কখনোই আপনার সহাবস্থান কিংবা সমন্বয় হবে নাকিন্তু যদি বলেন আপনি প্রগতিবাদী, মানবতাবাদী বা সেক্যুলা; তাহলে স্পষ্ট হয় আপনি ধর্ম নিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়ীক, উদার, প্রগতিশীল কিংবা মুক্তমনা
 ২য় পর্ব- (ধর্ম, ধর্মমতবাদ, বিজ্ঞান, জগ, ঈশ্বর, নাস্তিকতা, মানবতা, প্রগতি এবং দর্শন)
নাস্তিক্যবাদের নাস্তিক আর প্রগতিশীল নাস্তিক কখনোই এক নয়কথাটি এভাবে বলা যায়, সব মুক্তমনাই নাস্তিক, কিন্তু সব নাস্তিকই মুক্তমনা নয়
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি ছিলেনভাষাবিজ্ঞান কিংবা ভাষাতত্ত্বে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিলকিন্তু তিনি দাঁড়ি রাখতেন, টুপি ব্যবহার করতেনআমরা প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাসী নই, তাই বলে তাঁর ভাষাজ্ঞানকে কিন্তু ভুল বলতে পারিনা
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, 'জীবে প্রেম করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর'ঈশ্বর নেই বলে তাঁর এই কথাটি কি অমূল্যবান? এখানে একটি ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না, কুকুর যখন যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হয় কিংবা যৌন ক্রিয়ার পরে তারা একে অপরের সঙ্গে যখন আটকে থাকে, তখন আমি বহুবার দেখেছি, মানুষদেরকে কুকুরের উপর আক্রমন করতে, পিটাতে, এমনকি ঐ অবস্থায় কুকুরের যৌনাঙ্গকে কাঁচি দিয়েও পোচ দিতে দেখেছি, বড় বিভস সেই দৃশ্যতাই বিবেকানন্দ যা বলেছেন তা অবশ্যই সঠিক বলেছেনএটুকু বলতে পারি, অন্য প্রানীর উপর অত্যাচার বিজ্ঞানের 'জীব বৈচিত্র সংরক্ষন' ভাবনায় ঠেকানো গেলেও, নাস্তিকতয়ায় সম্ভব নয়
বেহিসেবি কিংবা অমিতব্যায়ীতার কারনে অনেকের জীবনকে দেখেছি ধ্বংসের মুখে, মূল্যহীনরাসূল বলেছেন, 'অপচয়কারী শয়তানের ভাই'শয়তান বলতে কিছু নেই বলে, এই কথাটির কি কোনো গুরুত্ব নেই? প্রয়োজনে আমরা কথাটিকে এডিট করে নিতে পারি
আরেকটি কথা উল্লেখ না করে পারছি না, রাসূল বলেছেন, 'শ্রমীকের মজুরী পরিশোধ করো, তার ঘাম শুকানোর আগে'আল্লাহ খোদা বলতে কিছু নাই এবং প্রচলিত ধর্মগুলো ভুয়া, তাই বলে এ কথাটি কি ফেলে দেওয়া যায়? এই কথাটি কেবল নাস্তিক্যবাদের নাস্তিকই পারে গুরুত্ব না দিতে, কিন্তু একজন মানবতাবাদী নাস্তিকের কাছে এ কথাটি মহামূল্যবান

৩য় পর্ব- (ধর্ম, ধর্মমতবাদ, বিজ্ঞান, জগ, ঈশ্বর, আধ্যাত্মিকতা, নাস্তিকতা, মানবতা, প্রগতি এবং দর্শন)
বিজ্ঞানে পাওয়া যায় - পরমানু কনা কিংবা কোয়ার্ক কনা কিংবা ইলেট্রন প্রোটন কনা দিয়ে আমাদের মহাবিশ্ব গঠিতএই কনা হচ্ছে অতি সুক্ষ্ম, যা বাহ্যিক নয় কিংবা দৃশ্যমান নয়এই মহাবিশ্বে দৃশ্যমান যত অবস্থা, শক্তি, রুপ বা আকার আছে, তা সেই পরমানু কনারই গঠন বিশেষ, বিশেষ্যত্ব বা নিয়মমহাবিশ্বের সবখানেই এই কনাগুলোর নিয়ম একই বজায় থাকেঅর্থা দৃশ্যমান কিংবা বাহ্যিক কোন অস্তিত্ত্ব, আসলে সেই অদৃশ্য কনারই ফলপ্রসুূ, কিংবা কোন শক্তি বা অবস্থাকে বিশ্লেষন করলে বা ভাংলে সর্বশেষ কিন্তু সেই কনাই পাওয়া যায়, এর পরে আর নিঃশেষ বা নিশ্চিহ্ন হয়নাঅর্থা কোন অবস্থা, যে বৈশিষ্ঠ ধারন করে বা নিয়ম পালন করে, তা কিন্তু সেই সুক্ষ্ম কনা'ই নিয়ন্ত্রন করে বা সেখানেই নিয়ন্ত্রিত হয়, অথবা কনা'র গঠন কিংবা বৈশিষ্ঠই এমনঅর্থা দৃশ্যমান জগতে যাবতীয় নিয়ম সেই সুক্ষ্ম কনা থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় কিংবা সেই কনা'র নিয়মই প্রদর্শন করে
বিজ্ঞানে আরো পাওয়া যায় - এক চরম শক্তি কিংবা ঘনিভুত পদার্থিক কনা- দ্বান্দিকতায় অর্থা ইনফ্লেশন হয়ে বিগব্যাং এর মাধ্যমে সমগ্র জগ কিংবা প্রকৃতি কিংবা সমগ্র মহাবিশ্ব গঠিত হয়েছে বা হচ্ছেলক্ষ করুন, বিগব্যাং এর আগেও কিন্তু সেই সুক্ষ্ম কনা'ই অবস্থিত ছিলসব কিছুর মূলে সেই কনা'অর্থা সেই সুক্ষ্ম কনা'ই হচ্ছে কোন অবস্থা কিংবা শক্তি কিংবা জড় কিংবা প্রান, আবার সকল অবস্থাই হচ্ছে মূলত্ব সেই সুক্ষ্ম কনা
এবার আসি আধ্যাত্মিকতায় - খোদা বলেন, "একদা আমি প্রেমের ধনাগারে নিহিত ছিলাম, অতএব নিজেকে প্রকাশ করার বাসনা জাগিল, তাই মানুষ কিংবা সমগ্রকে সৃজন করিলাম"
অর্থা দ্বিধা হলো, দু নিয়া হলো, সৃজিত হলো, প্রস্ফুটিত হলো, বিকশিত হলোমানে, অনন্ত অসীম নিরবধি সেই পরম কিংবা ঘনিভুত কিংবা নিহিত অবস্থা বিস্ফোরিত হলো, ক্রমশ সম্প্রসারিত হলো এবং হচ্ছেএভাবেই পরম- অনন্ত পথে, সীমাহীন, নিরবধি, চলমান, গতিশীলএক্ষেত্রেও বিজ্ঞান বলে, 'প্রত্যেকটি ক্রিয়ারই একটি বিপরীত ও সমান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে' কিংবা 'মহাশুন্যে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির, এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল অবস্থায়ই থাকবে'
বিংশ শতাব্দীর আগে বিজ্ঞান আজকের মতো এত পরিপূর্ন ছিল নাকিন্তু ধ্যানি, যোগি, তপস্বী, জ্ঞানীরা কিন্তু আরো বহুকাল আগে থেকেই এই উপলব্ধি করে আসছেতাই প্রচলিত ধর্মগ্রন্থ দিয়ে সম্ভব নয়, বরং বিজ্ঞানকে যদি একটু দর্শন দিয়ে উপলব্ধি করতে চাই কিংবা বুঝতে চাই, তাহলে এটাই স্পষ্ট হয়, যেমন আধ্যাত্মিকতায় পাওয়া যায় - "জগ সংসার খোদা সৃষ্টি করেনি, বরং জগ সংসারে খোদা নিজেই সৃষ্টি হয়েছেন"অর্থা সৃজিত হয়েছেন, দৃশ্যমানে বা কোন অবস্থায় লীন হয়ে বিলীন হয়েছেন
আধ্যাত্মিকায় আরো পাওয়া যায় - সৃষ্টি এবং স্রষ্টায় অভেদ নেইকিন্তু স্রষ্টা এখানে সৃষ্টিকর্তা নয়, বরং এক- পরম, চৈতন্যময়, ঘনিভুত, শাশ্বত, চিরঞ্জীব এবং প্রেমময় অবস্থালয়, ক্ষয়, বিনাশহীন এক বৈচিত্র্যময় অবস্থা; যার সৃষ্টি বা ধ্বংস নেইএটাই সেই ঘনিভুত, একীভুত, চৈতন্যময়, ঐশ্বর্যময় অবস্থাবিজ্ঞান বলে, 'পৃথিবীতে শক্তি নির্দিষ্ট'এই শক্তিই হলো সেই ঘনিভুত অবস্থাএটাই সেই বিগব্যাং এর আগের মূহুর্ত, ইনফ্লেশনের আগের অবস্থাতেমনি বিজ্ঞান আরো বলে, 'শক্তির কোন ধ্বংস বা বিনাশ নেই, শক্তি কিংবা অবস্থা শুধু এক রুপ থেকে অন্যরুপে রুপান্তরিত হয়'আবার পরমানু কনা'কে যদি অধিক উচ্চমাত্রার তাপ প্রয়োগ করা হয়, দেখা যাবে পরমানু কনা' সর্বশেষ তড়ি চুম্বক বল ও নিউক্লিয়ার দুর্বল বল- এক হয়ে যায়, তখন পরমানু কনা'কে আর বিভাজন করা যায়না, তখন একটা প্রতিসাম্যতা সৃষ্টি হয়, এটা হচ্ছে নির্লিপ্ততাসুফীতত্ত্বও বলে - ঈশ্বর নির্গুনএই নির্গুন কিন্তু গুনহীন নির্গুন নয়অবস্থার গুনে তিনি গুনান্বিতঅবস্থার ভিতরেই তাঁর গুন লীন হওয়া
বিজ্ঞান বলে, মৃত্যুর পর দেহ জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অন্য অবস্থায় রুপান্তরিত হয়, কিন্তু নিঃশেষ হয়নাসুফীতত্ত্বে একে বলে জন্মান্তরঅর্থা অনেক অবস্থা তথা জড় কিংবা প্রানের মধ্য দিয়ে পরিভ্রমন এই পরিভ্রমনও নিরবধিপানির ৩ অবস্থা - বরফ, বাষ্প এবং পানি৩ টিতেই কিন্তু পরমানু কনা বিরাজমান, শুধু বাহ্যিক রুপ এবং বৈশিষ্ঠ আলাদা
এক হতে বহু, আবার বহু মিশে আছে একেসব ভিন্ন মিশে আছে অভিন্নতেজগতের সকল রুপ কিংবা আকার তাঁর, আর সব অবস্থা কিংবা রুপ কিংবা আকারে মিশে; তিনি হয়েছেন নিরাকার, অদ্বিতীয়
একটু অন্যদিকে যাই, মারেফত বলে, 'নিরাকারে সেজদা হারাম', কিংবা 'আল্লাহ-আদম এক না হলে, পাপ হতো আদমকে সেজদা দিলে'এখানে নিরাকার হচ্ছে সেই সুক্ষ্ম অবস্থাযখন আকার হয়, তখন আমরা আকার দেখি, কিন্তু সেই সুক্ষ্ম কনাকে দেখিনা বা নিরাকার সেই একীভুত অবস্থাকে দেখিনাতাই না দেখে, না চিনে, না জেনে, না বুঝে- নিরাকারকে কি সেজদা করা যায়? আকার যদি না বুঝি, তাহলে নিরাকারকে বুঝবো কিভাবেধরার ভিতর দিয়েই অধরার প্রকাশভেবে দেখুন, 'সেজদা করা এক জিনিস, আর সেজদা দেওয়া অন্য জিনিসসেজদা করতে হয়না, সেজদা দিতে হয়'
আবার 'আহাদ থেকে আহম্মদ, আহম্মদ থেকে মোহাম্মদ'এখানে আহাদ হচ্ছে সুক্ষ্ম অবস্থা, আহম্মদ হচ্ছে ইনফ্লেশন অবস্থা, মোহাম্মদ হচ্ছে জগতের দৃশ্যমান অবস্থাআলিফ লাম মিমসব একইসবই একএক আছে ভিন্নতে কিংবা অন্যতে; আবার সব ভিন্নই মিশে আছে একে
যাই হোক, যদি বলি বিজ্ঞানের দর্শন ভাবনা এমন যে, এই 'কনা' সেই ঈশ্বর কিংবা পরম কিংবা চৈতন্য কিংবা আত্মা কিংবা মন কিংবা হৃদয়; তাহলে কি ভুল বলা হবে?
আবার যদি বলি, 'মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মসজিদ, মন্দির, গীর্জা কিংবা কাবা নাই', কিংবা 'শোন মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই', কিংবা 'যা আছে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডে, তা আছে মানব ভান্ডে', কিংবা 'আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে, দিব্যজ্ঞানী সে হয়েছে', কিংবা যদি বলি, 'নিজেকে জানো', তাহলেও কি ভুল বলা হবে?

৪র্থ পর্ব- (ধর্ম, ধর্মমতবাদ, বিজ্ঞান, জগ, ঈশ্বর, আধ্যাত্মিকতা, নাস্তিকতা, মানবতা, প্রগতি এবং দর্শন)
কেউ যদি বলে - সে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, কি খ্রীষ্ঠান; এটা যেমনঠিক কেউ যদি বলে সে নাস্তিক (নাস্তিক্যবাদী), এটাও তেমনতবে নাস্তিক (নাস্তিক্যবাদী) হয়তো ধর্মান্ধদের মতো রক্ষনশীল, গোঁড়া কিংবা কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়নাতবে দু'য়ের মধ্যে জ্ঞান এবং চিন্তায় পার্থক্য থাকলেও ফলাফল একইযার জ্ঞান আছে, তার পরিচয় - তিনি মুক্তমনা কিংবা প্রগতিবাদী'সৃষ্টিকর্তা নেই' এটা আপনার একটি জ্ঞান চিন্তা, এটা পরিচয় নয়এই পরিচয় হয় তখন, যখন আপনার কাজ উদারবাদী নয়, শুধু জড়বাদী আর তখনই আপনি নিজেকে পরিচয় দেন নাস্তিক বলে, আপনি তখন হন নাস্তিক্যবাদী
আমি বেশ কয়েকজন নাস্তিক্যবাদী নাস্তিকের সাথে কথা বলেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে, তারা দয়াহীন, মায়াহীন, মনহীন, জড় পদার্থ কিংবা শুধুই প্রানীআবার আমি কয়েকজন নারীবাদী নারীর সাথে কথা বলেছি, তারা একই সাথে নাস্তিক্যবাদীও তাদেরকেও মনে হয়েছে হৃদয়হীন, প্রেমহীনআমি নিশ্চিত, যদি নারীতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থাকতো, তাহলে ঐসকল নাস্তিক্যবাদী নারীরা আমাদের পুরুষদেরকে আজীবনই অত্যাচার করতো নিঃসন্দেহে
একজন নাস্তিক্যবাদী নাস্তিক আছেন, যিনি একদিন এক কমেন্টে লালন সাঁইজিকে ব্যাঙ্গ করে বলেছেন লালন ফালন আমি হতবাক হয়েছি, প্রচলিত ধর্মমতবাদ আর লালন দর্শন যে এক না, সেটা সে জানেই নাআবার আরেকদিন সে, একটি গ্রুপ পেজে মানবতাবাদ বলতে নাস্তিকতাকে বুঝিয়েছেনএখন তাকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, লালন দর্শন কি আর মানবতা কি?
যে সকল উগ্র নাস্তিক্যবাদী নাস্তিকগন যখন অযথাই ধর্মমতবাদ, ধর্মগ্রন্থ, ঈশ্বর নিয়ে বিতর্ক তোলেন, তখন মনে হয়- মানুষের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ নয়, তাদের কাজ কেবল নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা কিংবা কোন এজেন্ডার হয়ে আর্থিক বিনিময়ে কাজ করাযদি এই হয়, তাহলে বলবো, আপনাদের কারনেই হুমায়ুন আজাদ কিংবা অভিজি রায়'রা মারা যায়, অথচ একজন হুমায়ুন আজাদের জন্ম নিতে অপেক্ষা করতে হয় এক মহাকাল সময়
একজন ধর্মান্ধকে বুঝ দিতে নাস্তিক হওয়া লাগেনা, সৃষ্টিকর্তা নেই বলে চিল্লানো লাগেনা; প্রকৃত ধর্ম কি সেটা বুঝলেই হয়, বিজ্ঞান কি সেটা বুঝতে হয়, জ্ঞান থাকতে হয়কিন্তু উদ্দেশ্য যদি হয় নাস্তিকতা কিংবা কোন মহলের স্বার্থ রক্ষা, তাহলে ভিন্ন বিষয়
কিন্তু প্রগতিবাদী নাস্তিকরা কখনোই এমন হতে পারেনানাস্তিক্যবাদী নাস্তিক আর প্রগতিবাদী নাস্তিক কখোনই এক নয়একটা কথা না বলে পারছিনা, একজন ধর্মান্ধ আস্তিকেরও সর্বশেষে সৃষ্টিকর্তার ভয়ে ভালো কাজের গ্যারান্টি থাকে, কিন্তু নাস্তিক্যবাদী নাস্তিকের সে গ্যারান্টি নেই
শুধু কি তাই, অনেক নাস্তিক্যবাদী নাস্তিককে দেখেছি, মানুষের হৃদয়বৃত্তি কিংবা শিল্পকলা কিংবা নন্দনকলাকে তাচ্ছিল্য করতে, অবৈজ্ঞানিক ভাবতেঅদ্ভত! বৈজ্ঞানিক নাকি অবৈজ্ঞানিক, সে ব্যাখ্যায় এখন যাবো না, তবে এটুকু বলবো, যদি অবৈজ্ঞানিক হয়, তাহলে বিজ্ঞান ব্যার্থ, আর যদি বৈজ্ঞানিক হয়, তাহলে আপনি ব্যার্থ, বর্বর এবং মূর্খ্যনাস্তিকতা প্রতিষ্ঠাই আপনার কাজ, মানুষের মুক্তি কিংবা সত্য উপলব্ধি আপনার কাজ নয়


৫ম পর্ব- (ধর্ম, ধর্মমতবাদ, বিজ্ঞান, জগৎ, ঈশ্বর, মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, আধ্যাত্মিকতা, নাস্তিকতা, মানবতা, প্রগতি এবং দর্শন)
জড়, প্রান এবং মন কি? কিংবা জড়, প্রান (জীব বা প্রানী), এবং মন (মানুষ) কি?
জড় = বস্তু বা অবস্থা বা পদার্থ > জৈবিক অনুভূতি নেই > নিজেকে টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট > গতিশীল > দৃশ্যমান।
প্রান = জীব কিংবা প্রানী বা অবস্থা বা পদার্থ > যার জৈবিক চাহিদা আছে অর্থাৎ আহার, নিদ্রা, ব্যাথা এবং যৌন অনুভুতি আছে > আত্মরক্ষায় ব্যাস্ত > ক্রিয়াশীল > দৃশ্যমান।
মন = অদৃশ্যমান ক্রিয়াশীলতা বা সুক্ষ অবস্থা যা দেখা যায়না, কিন্তু প্রকাশ ভঙ্গি আছে। দর্শনের ভাষায় একে বলা যায় -- অন্তর বা হৃদয় বা মন বা আত্মা বা পরম বা চৈতন্য; কিংবা অনুরাগ বা অনুভব বা মোহনভাব বা আবেগ বা কল্পনা বা চিন্তা বা ইচ্ছাশক্তি। এটাও অদৃশ্যমান বা সুক্ষ্ম যার প্রকাশ আছে এবং ক্রিয়াশীল। আর বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা যেতে পারে - পরমানু বা ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রন কনা বা কার্ক কনা বা কোয়ান্টম জগত যা অদৃশ্যমান বা অতি সুক্ষ্ম, কিন্তু অস্তিত্ত্ব আছে এবং গতিশীল কিংবা ক্রিয়াশীল।
যার অবস্থান আছে, আকার ও আয়তন আছে, প্রত্যক্ষ ভাবে চলাফেরা করতে পারেনা কিন্তু পরোক্ষভাবে ক্রিয়াশীল, এবং বল প্রয়োগ করলে বাধার সৃষ্টি করে কিংবা নিজেকে টিকিয়ে রাখতে চায়, তাহাই জড়। যার অবস্থা আছে, আকার আছে, প্রত্যক্ষ ভাবে চলাফেরা করতে পারে এবং যার শুধু জৈব অনুভুতি আছে এবং প্রতিকুল পরিবেশে যে আত্মরক্ষা করতে জানে, তাহাই জীব কিংবা প্রানী। কিন্তু মানুষই একমাত্র জীব, যে অন্যের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারে; যদিও অন্য জীবের ন্যায় মানুষও আত্মরক্ষায় ব্যাস্ত, কিন্তু অন্য জীব শুধু আত্মরক্ষাই করে, মানুষের ন্যায় আত্মোৎসর্গ করতে পারেনা। আর মানুষের এটা সম্ভব হয় শুধু 'মন' থাকার কারনে।
এই 'মন' মূহুর্তেই আলোর গতির চেয়েও গতিশীল, ক্রিয়াশীল, চৈতন্যময়। এখানে মন বা সুক্ষ্ম অনেকটা আইনস্টাইনের E = mcq2 এর মতো, তরঙ্গ শক্তির ন্যায়, আলোক শক্তি কিংবা চৌম্বক শক্তির ন্যায়।
জড় হচ্ছে বস্তু কিংবা দেহ, যার জৈবিক অনুভূতি নেই। প্রান হচ্ছে জৈব অনুভূতি সম্পন্ন সত্ত্বা, কিংবা প্রান হচ্ছে জড়েরই পরিবর্তিত অবস্থা বা জড়েরই বিবর্তিত রুপ কিংবা রুপান্তর; দেহ ছাড়া প্রান ধারন হয়না, মানে প্রানী কিংবা জীব একই সাথে জড় এবং প্রানের সমষ্টি। আর মন হচ্ছে মানুষ নামক জীব বা প্রানীর বিশেষত্ব, অর্থাৎ মানুষ একই সাথে দেহপ্রান এবং মনের সম্মিলন। ভেবে দেখুন অন্য প্রানী কিংবা জীবের মহৎ কোন অর্জন নেই, কিন্তু মানুষের আছে, মানুষ ইচ্ছা করলেই পারে দেবত্ব বা মহত্ব অর্জন করতে, শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে, যেটা অন্য জীবে পারে না।
প্রান ধারন করতে দেহ লাগে, যখন দেহে প্রান ধারন হয়, তখন বলি জীব; এখানে দেহ হচ্ছে জড় বা বস্তু, আর জীব হচ্ছে শুধু জৈব অনুভুতি সম্পন্ন, জীব শুধু নির্দিষ্ট জৈবিক অনুভুতিতে সাড়া দেয়, অর্থাৎ অনুভূতি আছে, কিন্তু অনুভব নেই, জ্ঞান নেই। কিন্তু দেহ এবং প্রান বা জীব সত্ত্বার বাইরেও মানুষের 'মন' নামক আলাদা একটি সত্ত্বা থাকে, তাই মানুষ একই সাথে জীব এবং মানুষ। তবে এই 'মন' নামক সত্ত্বা থাকা সত্ত্বেও, মানুষকে সেই 'মন' বা 'জ্ঞান'কে অর্জন করে নিতে হয়। আর ইচ্ছা করলেই মানুষ, এই মন নামক সত্ত্বাকে অর্জন করতে পারে, আর অর্জন করতে পেরেছে বলেই মানুষ - প্রগতি চায়, সভ্যতাকে সাজাতে চায়, অমর হতে চায়। তাই মানুষের অভিলাষ অনন্ত এবং অসীম। শিল্পকলা, চিত্রকলা, সাহিত্য, সুর ও সংগীতের ভিতর দিয়ে মানুষ মূলত্ব সেই মমন বা পরমের ভাবই প্রকাশ করে। যা অন্য জীব পারেনা। অন্য জীবের সত্ত্বা একটি, জীব সত্ত্বা। মানুষের সত্ত্বা দুইটি। জীব সত্ত্বা এবং মন বা বিবেক বা চৈতন্য বা পরম বা মানব সত্ত্বা।