সামনের ফ্লাটের বারান্দায় বসে গুন গুন শব্দে কাঁদছে কেউ একজন। গাঢ় এই আঁধারভরা রাতে ঝির্ ঝির্ বাতাসে ভর করে কোন এক নারী কণ্ঠের গভীর বেদনামাখা কান্নার শব্দ ভেঁসে আসছে....।
যেন যুগ যুগ ধরে এক পৃথিবী দু:খ বুকে নিয়ে বসে বসে কাঁদছে কেউ একজন।
বেশ কিছু সময় কান পেতে রইলাম। হুম কাঁদছে কেউ একজন। গুন গুন শব্দে করুণ মায়াভরা কণ্ঠে কাঁদছে কেউ একজন।
কে কাঁদছে অমন করে এই মধ্যরাতে? এই নিস্তব্ধ রজনীতে এমন নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন করে চলছে?
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বুঝলাম, সেই মেয়েটি। সেই তরুণী মেয়েটি। প্রায় রাতেই যার গুন গুন কান্নার শব্দ কান পাতলেই শুনতে পাওয়া যায়।
কেন কাঁদছে সে? কি এমন অব্যক্ত বেদনা জমা রয়েছে বুকের গভীরে। যে বেদনা ফোঁপানো চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়ে প্রায় রাতেই?
সেদিন কে একজন বলছিল, আজ পাঁচ বছর হয় মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। গত দুই বছর থেকে স্বামী প্রায় রাতেই নেশা করে বাসায় ফেরে। বাসায় ফিরেই মেয়েটিকে গালমন্দ করে। তারপর গায়ে হাত তুলে। এরপরই মেয়েটি বারান্দায় একাকী নি:শব্দে অশ্রু বিসর্জনে বসে যায়।
জানতে পারলাম, বিয়ের পর গত ক বছরে একটি বারের জন্যও সন্তান ধারণে সক্ষম হয় নি মেয়েটি। এটিই তার অপরাধ।
স্রষ্টার ত্রুটিপূর্ণ সৃষ্টির জন্য কি সৃষ্টি দায়ি, নাকি স্রষ্টা?
একদিকে মাতৃত্বের স্বাদ না পাবার হাহাকার। অপর দিকে মধ্যরাতে বাসায় ফিরে স্বামীর অবর্ননীয় নির্যাতন- এভাবেই প্রায় মধ্যরাতে তার চাপাকান্না হয়ে ঝরে পড়ে।...
অথচ একদিন নাকি একবুক ভালোবাসা আর স্বপ্ন নিয় ছেলেটির হাত ধরে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে বাড়ির বাহির হয়ে এসেছিল মেয়েটি।