সুশীল আপুরা! নিশ্চয়ই ঈদ কেনাকাটায় ভীষণ ব্যস্ত রহিয়াছো । তোমাদের
এমন ব্যস্ততম সময়ে তোমাদেরকে ডিষ্টার্ব করা আদৌ উচিৎ হচ্ছে না তবুও তোমাদেরকে দু’খানা
কথা বলিতে না পরিলেই নয় । সম্প্রতি লক্ষ্য করিয়াছি তোমাদের ঈদ
কেনাকাটার তীব্রতা দেখিয়া পুরুষ সমাজের কেউ কেউ তোমাদের কটাক্ষ করিয়া হেয়
প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টায় নামিয়াছে । দূলাভাই জনদেরকেও এ অপকর্মে জড়াইতেছে । আমি
তাহাদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া তোমাদের পক্ষে অবস্থান করিয়াছি । যতো
পারো কেনাকাটা করো । দূলাভাইয়ের মানিব্যাগ, ক্রেডিট
কার্ড মরুভূমি করিয়া দাও । প্রয়োজন হইলে লোন লইতে বাধ্য করো ।
বছরে একখানা মাত্র ঈদ যে সময় তোমরা একটু কিনিতে-কাটিতে চাহো
কিন্তু তাহাতে কেউ বাঁধা হইবে আর তোমরা তাহার গর্দান ফেলিয়া দিবে না একথা আমি
দুঃস্বপ্নেও ভাবিতে পারিনা । গর্দান আস্ত রাখিলেও অন্তত চরম
হেস্ত-নেস্ত করিয়া ছাড়িবে এ ব্যাপারে আমি ভয়াবহ রকমের নিশ্চিত ।
সারা বছর দুলাভাইয়ের এতো এতো আব্দার রাখিয়াছো ঈদে তোমাদের মেজাজ
যখন তিড়িক তিড়িক করিতেছে তখন তোমাদের একটুখানি আহ্লাদিত শখ্ পূরণ হইবে না একথা
শুনিলে তোমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারো এ ব্যাপারটিতে আমি শতভাগ বিশ্বাস
করি ।
পরামর্শ দিতেছি,
শপিংয়ে যাওয়ার জন্য দূলাভাইকে বাধ্য করিয়া তোমরা খুব ভোরে হটপটে করিয়া লান্স এবং ডিনার লইয়া ঈদ শপিংয়ে বের হইবে এবং পরের দিন দুলাভাইদের মাথায় পাহাড়সম শপিং ব্যাগ চাপাইয়া দিয়া তাহাকে তাড়াইতে তাড়াইতে নিয়া আসিবে । এমন দৃশ্য আমার চোঁখে এখনি ভাঁসিতেছে ।
শপিংয়ে যাওয়ার জন্য দূলাভাইকে বাধ্য করিয়া তোমরা খুব ভোরে হটপটে করিয়া লান্স এবং ডিনার লইয়া ঈদ শপিংয়ে বের হইবে এবং পরের দিন দুলাভাইদের মাথায় পাহাড়সম শপিং ব্যাগ চাপাইয়া দিয়া তাহাকে তাড়াইতে তাড়াইতে নিয়া আসিবে । এমন দৃশ্য আমার চোঁখে এখনি ভাঁসিতেছে ।
কিরণমালা সারা-রা, ফ্লোর টাচ গাউন, বজরঙ্গি
ভাইজানের কারিণা গাউন, পাখি-পশুসহ তোমাদের যা ইচ্ছা তাহাই
কিনিবে।
কিন্তু আমার দু’খানা
দাবী রহিয়াছে, নিম্নে তাহা পেশ করিতেছিঃ-
,
দাবী নাম্বার এক <>
তোমার বাসায়
নিশ্চয়ই তোমার সন্তানের সমবয়সী কিংবা তাদের চেয়েও কম বয়সের একটি ছেলে বা মেয়ে
দিনরাত কাজ করিয়া চলিতেছে । নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে পেটের দায়ে তুমি
যাহা বলিতেছে তাহাই করিতেছে । তোমার গর্ভের সন্তানকে যখন আদর-যত্ন করো
তখন ছোট্ট বালক/বালিকাটির হৃদয়ে তার বাবা-মায়ের একটুখানি আদর পাইবার জন্য ভেতরে
ভেতরে হুহু করিয়া কাঁদিতে থাকে । আসন্ন ঈদে তোমার ছেলে-মেয়েরা নতুন-নতুন
জামা-কাপড় পরিধান করিয়া উৎসবে উল্লাসিত-উল্লম্ফিত হইবে আর তোমার গৃহ-পরিচারিকাটি
মলিন জামায় রান্নাঘরে কাজ করিতে বাধ্য হইবে এমনটা যেন না হয় । অল্প টাকার
মধ্যে হইলেও একটি বস্ত্র এই ঈদে ওকে উপহার দিও । সম্ভব হলে
ওরটা আগে ক্রয় করিও এবং ওর হাতে সবার আগেই তুলিয়া দিও ।
,
,
দাবী নাম্বার টু <>
ঈদ উপলক্ষ্যে
তোমাদের যাহা ইচ্ছা তোমারা তাহাই কিনিবে । তবুও মনে প্রাণে বিশ্বাস পুষি তোমরা
দেশেপ্রেমিকের অনন্য দৃষ্টান্ত । সুতরাং দেশের পোষাক শিল্পের প্রতিও একটু
খেয়াল রেখো । বিদেশী পোষাকে তোমাদের প্রবল আগ্রহ যেভাবে লক্ষ্য করিতেছি
তাহাতে তোমাদেরকে সরাসরি দেশী পোশাকের প্রতি আগ্রহ দেখাইতে বলিলে ঈদ শপিং বাদ দিয়ে
আমার দিকে ধাওয়া করিয়া আসিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকিবে না । তাই তোমাদের
কাছে আরজি, দুই বা ততোধিক পোশাক খরিদ করিলে বিদেশী ও দেশী পোশাকের মধ্যে
সমন্বয় ঘটাইয়ো । একটি কিরণমালা সারা রা কিনিলে আরেকটি দেশী বুটিকার স্যালোয়ার
নিও । একটি
কথা বলিবো বলিবো করিয়াও আটকে যাইতেছি । দূলাভাইকে খুব বেশি আর্থিক ও মানসিক
প্রেসারে রাখিও না । যদি বেশি প্রেসার দাও তবে শরীরে প্রেসার উঠিয়া যাইতে পারে আর
এমন হলে তোমাকে পোশাক বাজারের পরিবর্তে ঈদের পূর্ব মূহুর্তে হাসপাতালে কাটাইতে
হইবে অন্যদিকে এক ঈদেই যদি ওকে কাবু করিয়া ফেলো তবে আগামী ঈদসমূহে যখন শপিংয়ে
যাওয়ার দাবী করিবে তখন তিনি বনবাসে চলিয়া গেলেও অবাক হইবার কিছু থাকিবে না । তাই
খুশিতে খুশিতে যাহা আদায় করিতে পারো তাহাই লইয়া লও । মনে রাখিবে,
সোনার
ডিম পাড়া হাসের পেট কাটিয়া একবারে সকল ডিম বের করিবার পরিকল্পনা উচ্চমানের বোকামীর
আওতাভূক্ত ।
.
বিদ্রঃ ঈদবাজারের যা অবস্থা দেখিতেছি তাহাতে শপিংয়ে যাওয়ার আগে
বাসায় বসে ধাক্কা-ধাক্কির ও দর-কষাকষির রিহার্সাল করিয়া লওয়ার জোর পরামর্শ দিতেছি ।
.
শপিংয়ের ঝামেলা থেকে বাঁচতে চাও?
.
আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি বোন/ভাবী
মহলকে দূলাভাই/ভাইদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছি । এ অভিযোগ যে
সর্বাংশে মিথ্যা ও বানোয়াট একথা আমি বাংলা কিংবা ইংরেজী গ্রামার হাতে নিয়া অনায়াসে
বলিতে পারি । সকালে একটি পরামর্শমূলক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর কয়েকজন ভাই অনর্গল
ইনবক্সে বেশ গুতাগুতি করিয়াছেন কিন্তু আমি তাহাদেরকে এ ব্যাপারে সদুত্তর দিই নিই । যাহারা
গুতাগুতি করিয়াছে তাহাদের কয়েকজন এখনও কুমার তাই আমার চিন্তা দুশ্চিন্তার মাত্রা
অতিক্রম করিয়া ভাবাইতে বাধ্য করিয়াছে-এনাদের সমস্যা কি ? এদের তো
কারো ঈদ পোশাক প্রদানের ঝামেলা নাই বরং পাওয়ার প্রশান্তি আসিবে । আমি
বোন/ভাবীদেরকে ঈদ কেনাকাটা করিতে উসকিয়ে দিয়েছি-এই অভিযোগ যাহারা তুলিয়াছেন
তাহাদের এবং যে ব্যাচেলররা আমাকে ধাওয়া করিবেন বলিয়া প্রস্তুত হইয়াছেন তাহাদেরকে
বিনা পয়সায় দু’খানা পরামর্শ দিচ্ছি-
.
পরামর্শ নাম্বার এক-(বিবাহিতদের জন্য)<->
কখনও
সরকারী হাসপাতালে বসবাস করিয়াছেন ? উত্তর যদি না হয় (হ্যা হইলেও
সমস্যা নাই) তবে আসন্ন ঈদের আগে কিছুদিনের জন্য হাসপাতালে কাটিয়ে আসুন । পেট
ব্যথা কিংবা অন্য কোন ছুতা দিয়া সরকারী হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারের শ্বরণাপন্ন
হইলেই তিনি আপনাকে অনায়াসে ভর্তি করিয়া লইবে (যদি ভর্তি করিতে না চাহেন তবে হাত-পা
ধরিবেন এবং আপনার বেহাল দশার কথা খুলিয়া বলিবেন । সংকোচ করিবেন
না কেননা তিনিও আপনার মত একই সমস্যায় ভূগিতেছেন সুতরাং তিনি আপনাকে সাহায্য করিতে
সর্বোচ্চা চেষ্টা করিবেন) এবং ঈদ পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই হাসপাতাল বাসের পাকা
ব্যবস্থা করিয়া দিবেন । এতে আপনার দুটো উপকার হবে-প্রথমতঃ সরকার আপনার স্বাস্থ্য সেবার
নামে কি দিচ্ছে সেটা সম্পর্কে একটা ধারনা জন্মাইবে এবং দ্বিতীয়তঃ ঈদ উপলক্ষ্যে
যিনি আপনার কানের কাছে ঈদ শপিংয়ের জন্য ঘ্যানর ঘ্যানর করিয়া বিরক্ত করিয়া
তুলিতেছেন তিনি শপিংয়ের কথা ভুলিয়া যাইয়া আপনার সেবায় মগ্ন হইবে । এতে
করে আপনার মানি ব্যাগ ও ক্রেডিট কার্ড অপুষ্টিতে পড়িবে না । তাহারা
নিশ্চয়ই ভাবিবে, গাছ বাঁচিলে এর ফল এবং ডাল-পালা পরেও চিবাইয়া চিবাইয়া খাওয়া
যাইবে ! (উল্লেখ্য যে, ভুলেও প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হইতে
যাইবেন না । এখানে ভর্তি হইলে আপনার লাভের চিন্তা লাঠে উঠিবে)
.
পরামর্শ নাম্বার টু-(অবিবাহিতদের জন্য)<->
যাহারা
একটি মাত্র প্রেমে মশগুল আছো তাহারা চেষ্টা করো আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে সামান্য কিছু
হলেও প্রেমিকাকে উপহার দেওয়ার জন্য । যদি একেবারেই ব্যর্থ হও তবে
স্বান্তনাসূচক বাণী দিয়ে তাদেরকে শান্ত রাখো । ভয় নেই,
তুমি
না দিলেও তাহারা তোমার মত অন্য অনেকের কাছ থেকেই পাইবে । আর যাহারা
একাধিক প্রেমে মশগুল আছো তাহারা ঈদের আগে কোন এক ছুতা ধরে সবার সাথে ব্রেক আপ
ঘটাইয়া ফেল । ভয় নেই, ঈদের পর একটু তেলমাখাময় চেষ্টা করিলেই
পাঁচ-সাতজন থেকে তুমি দুই-তিনজন অনায়াসে ফিরিয়া পাইবে । তুমি ভন্ড
চরিত্রের হইলেও এতে তোমার প্রেমিকাদের তোমার প্রতি ভালোবাসার গভীরতা ও সত্যতা যেমন
নিরূপন হইবে তেমনি ঈদের পূর্বে বাবার পকেট থেকে টাকা চুরির অপবাদ হইতেও তুমি
বাঁচিয়া যাইবে ।
.
পরামর্শ যাহা দিলাম ইহা পালন করিতে পরিলে তোমার সুইস ব্যাংকে
এ্যাকাউন্ট খোলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল জানিবে । তবে মনে রাখিও, তোমার
বউ কিংবা প্রেমিকা যদি সাবিনার (কিরণমালা সারা রা না পেয়ে দ্বিতীয় আত্মহত্যাকারী)
মত আবেগী হয় তবে ভূলেও পরামর্শ মানিতে যাইবে না । ভিটে-মাটি
বেচিয়া হলেও ঈদের শপিং করিয়া দিও । তা না হলে তোমার কপালে কচু-পোড়া ভর্তাও
জুটিবে না । শপিংয়ের জন্য যে ভিটে-মাটি বেঁচিলে না তাহা বেঁচিয়া তখন আরেক
সম্প্রদায়কে দিতে হইবে । পুনশ্চঃ আইডিয়া প্রদাকারীর সাথে ঈদের
পূর্বে কেহ যোগাযোগ করিবার চেষ্টা করিবে না...