Monday, September 7, 2015

"এই বেঁচে থাকার আনন্দ...

জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষার পুরোটাই না-পাওয়ায় হারিয়ে যায় না। যে দুর্নিবার বোধ মনের ভিতরে তৈরি হয় তাই তার নিষ্কলুষ চাহিদাকে বাঁচিয়ে রাখে। সব যখন চলে যায় তখন ঐ বোধটুকুই সম্ভবতঃ করুণা ধারায় তার আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখে এক ধরনের অসুখের ভেতরে সুখের হাওয়া লাগিয়ে...
অসীমের কাছে হাত বাড়িয়ে সসীম এই জীবন কতটুকুই বা পেতে পারে! ছোট অথচ দীর্ঘ কিন্তু অনির্ণেয় জীবনের গাড়িটাকে চালিয়ে নেওয়ার পথে কোথাও না কোথাও থামতে হয়, জীবনটাকে একবার দেখে নিতে...কতটুকু এলাম, পেলাম কতটুকু? বাকী রইলো কি! কতো জনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, যাকে লাগলো ভাল তাকে পাওয়া কি গেল? পেলাম যদি তবু রইলো কি বাকি! জীবন তো একটাই, অংশী কি একটাই? তাই যদি হয় তবে কেন আর এতো আয়োজন প্রতিদিন? কিসের আশায় চোখে-মুখে রঙ লাগিয়ে রঙের খেলা খেলি প্রতিদিন? সবকিছু লীন হয়ে যায় না কেন- কোরক ফোঁটার আগেই! “সবাই খেলারাম, খেলেচলে” তবুও বলে না তো পথিক তোমার হাত ফিরিয়ে নাও, ফিরে যাও ঘরে! সম্ভাবনার সূর্যরেখা শতোপর্ণ গলিয়ে হীরকখন্ডের ঝিঁলিক ছড়িয়ে কতদিন সেই স্বপ্নভেলা ভাঁসিয়ে রাখবে! তা না জানলেও জীবনের কিছুটা অংশ মোহ-মদিরে ডুবিয়ে রাখবে, জীবনকে দেবে মখমল রঙিন চাঁদরে মোড়া আদুরে ভালবাসা...যার অস্তিত্ব থাকবে অনস্তিত্বের ভিতরে। কথা থাকবে না কোন, থাকবে শুধুই মনকাড়া মোহময় সুর, যে সুরের উৎস জানা নেই, শুধুই মোহাবিষ্ট টেনে নিয়ে চলে জীবনের কোন সে চরাচরে!
একটা নরোম উষ্ণ আশা জাগানিয়া আনন্দধাম...বর্ধিত হাত ছুঁয়ে যাওয়ার আশায় মুদিত নেত্রে দিনাতিপাত। তারপর একদিন...কোন একদিন দেখা দেবে সেই ধ্রুপদী সেতারে পৃথিবী ভেঙে-পড়া বিবশ-বিধুর সুরে সবকিছু টুকরো হয়ে যাওয়ার আখ্যান। জবাব মিলবে অবশেষে, কিন্তু অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে না। দুর্বোধ্য সে বাণী নীল বিষ হয়ে কেবলই হৃদয় দংশন করবে। কি নির্মোহ আর বিশুদ্ধ অথচ ক্ষুদ্র আকাঙ্ক্ষা...তবু কেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়! দোষটা তবে কার? অর্ঘ্য সাজিয়ে যে পূজারী দেবীর বেদীতে সমর্পণ করেছে, তাঁর? নাকি স্বয়ং দেবীর? দেবীর তো কোন দোষ হতে পারে না! সে তো স্বয়ম্ভরা! এ ব্যর্থতা পুজারীর। পূজারীর সাধ্য কি দেবীকে তুষ্ট করে তাঁর সসীম পৃথিবীর সীমাবদ্ধ ঐশ্বর্য দিয়ে? এত ঐশ্বর্য কোথায় পাবে সে! আর তাই ব্যর্থতার তলানীটুকুই তাঁর বেঁচে থাকার আনন্দ আরেক জীবনের আশায়। এই আনন্দে কোন ক্ষেদ নেই, আছে শুধু এক ভগ্নস্তূপের গহীন আঁধারে লুকিয়ে থাকা অজানা জলের অবিরাম শব্দসুর…টুপ...টুপ...টুপ!