Monday, September 7, 2015

"দেশীয় আলেমদের মূর্খতা"---

আমাদের দেশের এক বিখ্যাত আলেমের ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। সেখানে তিনি পরিষ্কার উচ্চারণে সিনেমার নায়িকাদের পতিতা বলছেন। বেপর্দা যেকোন নারীকে পতিতা বলছেন। এবং নিজেকে ছাড়া বাকি সবাইকেই জাহান্নামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
আরেকজনের ভিডিও ক্লিপ দেখলাম, যিনি হিন্দুদের নিয়ে সস্তা রসিকতা করছেন। বিধর্মীদের গালাগালি করছেন।
আরেকজন ইহুদি খ্রিষ্টানদের "জাত শত্রু" বলে সবাইকে তাঁদের বিরুদ্ধে উম্মাহকে উস্কে দিচ্ছেন।
সবচেয়ে আফসোস হলো এইটা দেখে যে লক্ষ লক্ষ লোক তাদের চোখ বুজে অনুসরণ করছেন। যাদের কারোরই ধর্ম সম্পর্কে বেসিক ধারনাটাও নাই। ফলে হুজুর যা বলেন, সেটাই সত্যি। এবং এর ফলেই আমাদের দেশে উগ্রবাদী আস্তিক ও ফাজিল নাস্তিকের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে।
এইবার কিছু লজিকের কথা বলি--- দেখুন পছন্দ হয় কিনা!
--- আমি যদি নিমন্ত্রণ দিতে আপনাকে বলি, "এই (বাজে গালি)----- বাচ্চা! তুই আর তোর সাত ঘাটের বেশ্যা বউটা তোদের হারামি বাচ্চাগুলিরে নিয়ে আমার বাড়িতে কাল খেতে আসবি"
- তাহলে কী আপনি আমার নিমন্ত্রণ গ্রহন করবেন?
তাহলে এই সমস্ত তথাকথিত ইসলামিক স্কলাররা কিভাবে আশা করেন, মনে ও মুখে ঘৃনা পুষে রেখে তারা মানুষের সাথে যাচ্ছেতাই আচরণ করবে, এবং লোকে চুপচাপ ইসলামকে "শান্তির ধর্ম" হিসেবে মেনে নিবে? যারা জীবনেও কুরআন পড়েনি, রসূল (সাঃ) কে চেনেনা, তাঁরা এই সমস্ত মূর্খদের আচরণে আমাদের সম্পর্কে কী ধারনা পাবে?
সেই সৃষ্টির শুরুতে, যখন শয়তানকে অভিশপ্ত করা হলো, এবং ইবলিস আল্লাহকে বলল, "আমি আপনার অনুসারীদের বিপথে চালিত করতে থাকবো।"
তখন আল্লাহ বললেন, "এবং আমিও বারবার ওদের ক্ষমা করতেই থাকবো।"
আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন, কার মনে কী আছে সে সম্পর্কে তিনি ভালই জ্ঞাত। সেই ক্ষমতা বা অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি।
হজরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত আল্লাহর এই বাণীর ভয়ে তটস্থ থাকতেন। এক যুদ্ধে উসামা ইবনে যাইদ (রাঃ) এক শত্রুর বুকে তলোয়ার চালানোর আগে আগে সে কলিমা পাঠ করলো। উসামা তবুও তলোয়ার চালিয়ে দিলেন।
এই সংবাদে রাসূল (সঃ) যার পর নাই দুঃখিত হলেন। উসামা বললেন, "সেতো প্রাণে বাঁচার জন্য কলিমা পাঠ করেছিল। ওটা একটা ধোঁকা ছিল।"
নবীজি (সঃ) বললেন, "তোমাকে কী তাঁর হৃদয় চিরে দেখার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে? তুমি কী করে এত নিশ্চিত হচ্ছো?"
হজরত হামজাহকে(রাঃ) হত্যাকারী ওয়াহশি একটা সময়ে কলিমা পড়ে মুসলমান হয়। যে লোক হজরত হামজাহকে হত্যা করেছে, তাঁকে পর্যন্ত নবীজি(সঃ) মাফ করে দিয়েছিলেন, আর আমাদের তথাকথিত স্কলাররা সামান্য অপরাধেই সবাইকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন।
ইসলামের প্রথম হিজরতে হজরত মুহাম্মদ(সঃ) মক্কার মুসলমানদের আবিসিনিয়ার এক খ্রিষ্টান রাজার সাম্রাজ্যে পাঠিয়ে দেন। মদিনায় মসজিদে নববীতে তাঁর কাছে আগত একদল খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের তিনি মসজিদে নববীর ভিতরেই যিশুর পূজা করার অনুমতি দেন। এবং ওরা ছড়িয়ে বেড়ান, খ্রিষ্টানরা আমাদের শত্রু?
বনু কুরায়দাকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার পেছনে তাদের ধর্মের কোন সম্পর্ক ছিল না। তারা চুক্তি ভঙ্গ করেছিল এবং মদিনায় অবস্থানকারী মুসলিম নারী ও শিশুদের উপর আক্রমন করেছিল। এই কাজ যদি কোন মুসলিম করতেন, তবে তাদেরও একই শাস্তির বিধান থাকতো। ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে নবীজি নিজেরও বিরুদ্ধে যেতেন। যেকারনে আমরা দেখতে পাই, মৃত্যুর মাত্রই কয়েকদিন আগে, জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে তিনি মসজিদে এসে উপস্থিত হন এবং নিজের পিঠ মেলে ধরে বলেন, "যদি কখনও আমি কাউকে অন্যায় আঘাত করে থাকি, তবে এই নাও আমার পিঠ। সেই আঘাতের শোধ নিয়ে নাও!"
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
আমাদের হুজুররা বাচ্চাদের খেলতে দেখলেই ভুরু কুঁচকে ফেলেন। অথচ আমার নবী তাঁর স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগীতা করতেন। আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে কখনও দৌড়েছেন?
একদিন হজরত উমার (রাঃ) মসজিদে এসে দেখেন নবীজি(সঃ) একদল নারীর সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন, এবং তাঁকে দেখে হেসে উঠেন।
"ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার হঠাৎ এই হাসির কারন কী?"
"ও উমার (রাঃ)! তুমি আসার কিছুক্ষণ আগেও এই মহিলারা আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছিল, তর্ক করছিল, অথচ তোমাকে দেখে সবাই (ভয়ে) চুপ হয়ে গেছে।"
মহিলাদের এই আচরণে কী বুঝতে পারছেন তিনি কতটা বিনয়ী এবং আপন হয়ে মানুষের সাথে কথা বলতেন?
--- মিনি স্কার্ট পড়া এক এয়ার হোস্টেস নোমান আলী খানের কাছে এসে বলেন, "আমি আপনার ভিডিও দেখি এবং দোয়া করবেন, আমিও যেন একদিন মুসলিম হতে পারি।"
এই মহিলা আমাদের দেশের সেই স্কলারের ভিডিওক্লিপ দেখলেন, যেখানে বেপর্দা নারীদের পতিতা বলা হয়েছে, অবশ্যই এমন সিদ্ধান্ত নিতেন না। এই গ্যারান্টি আমি লিখে দিতে পারি।
ইসলাম হচ্ছে সেই ধর্ম, যেখানে বলা হয়েছে, সারাজীবন পতিতাবৃত্তি করা মহিলাও একবার কিছু পিঁপড়াকে পানি খাইয়েছিল, এবং শুধু এই কর্মের ফলে আল্লাহ সেই মহিলার সমস্ত জীবনের গুনাহ মাফ করে দিয়েছিলেন। ঐযে উপরে বললাম, তিনিই ইবলিসকে বলেছিলেন, "...এবং আমি বারবার তাদের মাফ করতে থাকবো।"
আবার এমনও ঘটনার উল্লেখ আছে, একজন চরম ধার্মিক ব্যক্তি, যিনি সারাজীবন আল্লাহকে খুশি করার পেছনেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন, তিনি একবার একটি বিড়ালকে অহেতুক লাথি মেরেছিলেন বলে তার সমস্ত জীবনের ইবাদত নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ঐ যে বললাম, "...অন্তরের খবর তিনিই ভাল রাখেন।"
যদি কেউ আল্লাহকে সত্যি সত্যিই ভয় পায়, সে কখনই তাঁর সৃষ্টির মনে একটুও আঘাত দেবার কথা কল্পনাও করবে না। সেটা বিড়াল হোক, অথবা পিঁপড়া, এবং মানুষতো অবশ্যই।
--- লেখা শেষ করা যাক বিখ্যাত তাবী আল রাবির জীবনের ঘটনা দিয়ে।
একদিন তিনি তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, "গত চল্লিশদিন ধরে আমার গোস্ত খেতে খুব ইচ্ছা করছে।"
স্ত্রী খুবই খুশি মনে গোস্ত রাঁধতে বসলেন। তাঁর স্বামী কখনই মুখ ফুটে কিছু চাননা। রান্না শেষে যখন খেতে বসবেন, ঠিক তখনই দ্বারে ভিক্ষুক এসে হাজির। সে গত তিন দিন ধরে কিছুই খায়নি।
আল রাবি নিজের পাতের গোস্ত ভিক্ষুককে খাইয়ে দিলেন।
স্ত্রী হায় হায় করে উঠলেন। "ওকে গোস্ত দেবার কী প্রয়োজন ছিল? ওতো জানতোও না আমাদের ঘরে গোস্ত রান্না হয়েছিল।"
তিনি বলেন, "আল্লাহ জানেন, এবং তিনি জানাই যথেষ্ট।"
--- একবার মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বেরিয়ে আসার পরে তিনি দেখেন তাঁর ঘোরা চুরি হয়ে গেছে। তাঁর সঙ্গীরা বললেন, "আল রাবি, তুমি ধার্মিক মানুষ। তুমি চোরকে অভিশাপ দিয়ে আল্লাহর কাছে দয়া করো।"
তিনি হাত তুলে বললেন, "ইয়া আল্লাহ! সে যদি অভাবের কারনে কাজটা করে থাকে, তবে তাঁর অভাব দূর করে দাও। আর যদি স্বভাবের কারনে এই কাজ করে, তবে তাঁকে সঠিক জ্ঞান দান করো।"
এই সেই আল রাবি, যাকে লোকজন বলতেন, "নবীজির সাথে যদি তোমার দেখা হতো, তাহলে তিনি তোমাকে পছন্দ করতেন।"
কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের কয়জন স্কলারের সাথে দেখা হলে নবীজী পছন্দ করতেন?
আমাদের কথা না হয় বাদই দিলাম।